হাসপাতালগুলোতে ৫৪ শতাংশ আসন ফাঁকা

বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু  করেছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৫ অগাস্ট ২০২০ ০৬:০৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬৩৯ বার।

বিপনী বিতান ও দোকান-পাট খুলে দেওয়ার কারণে গেল ঈদুল ফিতরের পর বগুড়ায় করোনার বিস্তার বাড়লেও পশুর হাটগুলোকে ঘিরে ঈদুর আজহার পর ওই ভাইরাসের  সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে না। ঈদুল ফিতরের একদিন পর ২৭ মে জেলায় করোনায় আক্রান্তের হার ছিল ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ আর ঈদুল আজহার একদিন পর ৩ আগস্ট ওই হার ২৭ দশমিক ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে। 
সংক্রমণের হার কমার কারণে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তিও কমেছে। জেলার ৩টি হাসপাতালে ৩০৮ শয্যার বিপরীতে এখন মাত্র ৪৬ শতাংশ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অথচ ঈদুল ফিতরের পর গেল জুন মাসে শয্যা সংখ্যার বাড়তি রোগী নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলো রীতিমত হিমশিম খেয়েছেন।
বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ আগের তুলনায় যে কমেছে সেটা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারাও স্বীকার করেছেন। তবে চুড়ান্ত পর্যবেক্ষণের জন্য তারা আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন। বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিনের মতে জেলায় করোনার সংক্রমণের হার আগের তুলনায় বর্তমানে স্থিতিশীল থাকলেও চুড়ান্ত পর্যবেক্ষণের জন্য আগামী সপ্তাহটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘যদি ১২ আগস্টের মধ্যে সংক্রমণের হার না বাড়ে তাহলে তখন আমরা চুড়ান্তভাবে বলতে পারবো বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ কমেছে।’
বগুড়ায় গত ১ এপ্রিল প্রথম এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তার পর থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ১২৫ দিনে জেলায় মোট ৪ হাজার ৯৫৮জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারাত্মক ছোঁয়াচে ওই ভাইরাসে জেলায় এ পর্যন্ত ১০৯জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর হার ২ দশমিক ১৯ শতাংশ। সংক্রমণের হার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার শীর্ষে থাকায় বগুড়া করোনার হট স্পট হিসেবে পরিচিত পায়।
অবশ্য আক্রান্তদের মধ্যে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মোট ৩ হাজার ৪৮৭জন সুস্থ হয়েছেন। সুস্থতার হার ৭০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জেলায় সরকারি ও বেসরকারি দু’টি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ১১৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর পরীক্ষা হয়েছে ২৫ হাজার ৬৮৩জনের। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে ঈদুল ফিতরের একদিন পর ২৭ মে থেকে। এরপর পুরো জুন মাস জুড়েই আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার লাফিয়ে বাড়তে থাকে। তখন স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১০ মে বিপনী-বিতান এবং দোকান-পাট খুলে দেওয়ার কারণেই করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় এবং ১০ জুন আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়। পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হার ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়। যে কারণে বগুড়া শহরের ৯টি মহল্লাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয় এবং বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে ৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ডও চালু করা হয়। 
তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি করোনার সংক্রমণ কমতে শুরু করে। গত ২৩ জুলাই জিলহজ্ব মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে হাটগুলোতে কোরবাণীর পশু কোনা- বেচা শুরু হয়। স্বাস্থ্য বিধি মেনে পশু কেনা-বেচার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হলেও কেউ তা মানে নি। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসতে শুরু করে হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। এতে অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন ঈদুল ফিতরের মত ঈদুল আজার পরেও করোনার সংক্রমণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কিন্তু আশার কথা হলো করোনার সংক্রমণ বাড়েনি।
করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বগুড়ায় প্রথম যে হাসপাতালকে বেছে নেওয়া হয় সেই মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান জানান, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ১২৮ শয্যার ওই হাসপাতালে গেল জুন মাসে সর্বোচ্চ ১৩৯জন রোগীকে ভর্তি করতে হয়েছে। কিন্তু ৪ আগস্ট মাত্র ৪২জন ভর্তি রয়েছেন এবং তাদের সবার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। একই তথ্য দিয়েছেন বেসরকারি টিএমএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ্ কমিউনিটি হাসপাতালের সহকারি নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহিম রুবেলও। তিনি বলেন, ওই হাসপাতালে ১৩০ শয্যার করোনা ইউনিটে বর্তমানে ৭০জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। অথচ গেল জুন মাসে সেখানে শয্যার অভাবে রোগী ভর্তি করানোই সম্ভব হয়নি। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাদের ৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ডে ৪ আগস্ট মাত্র ৩০জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, এটা স্বীকার করতেই হবে যে বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ আগের তুলনায় কমেছে। তবে মানুষ যেহেতু এখনও ঈদের আমেজে রয়েছেন এবং আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাচ্ছেন তাই এটা আবার খানিকটা বাড়তেও পারে। এজন্য আরও একটি সপ্তাহ আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আগস্টের ১২ তারিখের পর যদি আর না বাড়ে তখন চুড়ান্তভাবে বলা যাবে বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ কমেছে।