সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনে তোলপাড়

বগুড়ার শেরপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অনিয়মে তদন্ত কমিটি গঠন, কালোবাজারি ঠেকাতে মাঠে প্রশাসন

শেরপুর(বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:৩৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২২৫ বার।

বগুড়ার শেরপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ দেয়া দশ টাকা কেজির চাল বিতরণে অনিয়ম ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি ওই কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে গঠিত কমিটিকে আগামি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
 

গত ২৮ সেপ্টেম্বর একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ‘শেরপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। পরদিন সকাল থেকেই ওই কর্মসূচির অনিয়ম ও চাল কালোবাজারে বিক্রি ঠেকাতে মাঠে নামেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ। সেইসঙ্গে এই সিন্ডিকেট ব্যবসায় জড়িতদের চিহিৃত করতে কমিটিও গঠন করে দেন তিনি। উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মো. ছায়েদুর রহমানকে আহবায়ক করে গঠিত কমিটির অন্যরা হলেন- উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোছা. শামছুন্নাহার শিউলী ও শেরপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও খাদ্য পরিদর্শক এসএম আতিকুল ইসলাম।
 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বর্তমান সরকার হতদরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু করেছে। প্রত্যেক ইউনিয়নে তালিকাভুক্ত কার্ডধারী ব্যক্তিদের দশ টাকা কেজিতে এই চাল দেয়া হয়। ইতিমধ্যে এই কর্মসূচির মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ সুফল পেয়েছেন। সরকারের এই মহতি উদ্যোগকে প্রশ্নবিধ করতে স্বার্থান্বেষী একটি মহল তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সেই তৎপরতা রুখতে হবে। দরিদ্রদের চাল নিয়ে অনিয়মে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এহেন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার প্রমাণ পেলে ডিলারশিপ বাতিলসহ প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলে পাঠানোরও হুঁশিয়ারী দেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

 

এছাড়া তিনি  মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের চৌমুহী বাজার, মির্জাপুর বাজার, ফুলবাড়ী বাজার, খামারকান্দি বাজার ও ঝাজর বাজারে অবস্থিত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রয়কেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এসময় ডিলার ও সুবিভাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। জনস্বার্থে এই ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, কোথাও কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তাঁকে গোপনে জানাবেন। তথ্যদাতার নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে। কোনদিনই প্রকাশ করা হবে না।
 

প্রসঙ্গত: চলতি মাসের ২১সেপ্টেম্বর এই উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সপ্তাহের তিনদিন সোম, মঙ্গল ও বুধবার এই চাল বিক্রি করা হচ্ছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মোট ২০জন ডিলারের দোকান থেকে তালিকাভুক্ত হতদরিদ্র ১৪ হাজার ৩৭১টি পরিবার ১০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৩০ কেজি চাল ক্রয় করতে পারবেন। আমন ধান ঘরে আসার আগ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালু থাকবে। কিন্তু সরকারের এই মহতি উদ্যোগে হতদরিদ্র মানুষ কোন সুফল পাচ্ছেন না। কারণ ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতদরিদ্র ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিলার ও তার লোকজন নয়ছয় হিসাব দেখিয়ে চালের পরিবর্তে নামমাত্র টাকা দিচ্ছেন। একইসঙ্গে বিতরণের মাষ্টাররোলেও তাদের টিপ ও স্বাক্ষর নিচ্ছেন। এরপর দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দের ওইসব চাল চলে যাচ্ছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর গোডাউনে। সেখানে দশ টাকা কেজির চাল বিক্রি করছেন ছত্রিশ টাকা কেজি দরে। এভাবে সুবিধাভোগীদের সঙ্গে ছলচাতুরীর মাধ্যমে তাদের চাল বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এছাড়া চাল বিতরণ নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় নাম থাকা অনেকেই এলাকায় নেই। আবার কেউ কেউ মারা গেছেন। তাছাড়া বেশকিছু ভুয়া কার্ডও রয়েছে। এরপরও তাদের নামে চাল বিতরণ বন্ধ নেই। নিজেরাই টিপ-স্বাক্ষর করে চাল উত্তোলন দেখিয়ে তা কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছিল। এক্ষেত্রে সব মহলকে ম্যানেজ করেই এই কাজটি করছেন বলে দাবি তাদের। তাই বিষয়টি জানার পরও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে ওই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। কারণ চাল বিতরণের প্রত্যেক মাসেই বাড়তি খরচ গুণতে হয় ডিলারদের। চালের ডিও নেয়া থেকে শুরু করে বিতরণের শেষ পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।