বগুড়ায় মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও  বড় ধরনের অভিযানে নামতে যাচ্ছে পুলিশ

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারী ২০১৯ ১৭:২৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৮৭ বার।

বগুড়ায় মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও বড় ধরনের অভিযানে নামতে যাচ্ছে পুলিশ। জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পূর্বের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হতে যাওয়া সরকার সারাদেশে আরও কঠোরভাবে দৃশ্যমান করতে চায়। এর পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ এমনকি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতসহ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ কাউকেই রেহায় দেওয়া হবে না। ধারণা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহ নাগাদ নতুন সরকার গঠনের পর পরই এসব বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চলে আসবে।
সূত্রগুলো বলছে, মাদক, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর এই মনোভাবের কথা এরই মধ্যে বগুড়ার অপরাধ জগতের বাসিন্দারাও আঁচ করতে পেরেছেন। নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে তারা এও জেনেছেন যে, অপরাধী হলে আওয়ামী লীগ কিংবা এর সহযোগী কোন সংগঠনের ছত্রছায়ায় থাকলেও এবারের অভিযানে রেহায় মিলবে না। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৯ মে সারাদেশের মত বগুড়াতেও মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হয়েছিল। প্রায় দুই মাস ধরে চলা ওই অভিযানে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুক যুদ্ধ’ এবং ‘নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে’ লিটন ওরফে রিগ্যান, ডিপজল ও পুতু নামে তিন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। অভিযানে অন্তত ৩০০জনকে গ্রেফতারও করা হয়। উদ্ধার করা হয় প্রায় ৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৪০০ বোতল ফেন্সিডিল, ২৫ কেজি গাঁজা ও ৩৮ গ্রাম হেরোইন। পুলিশের সাঁড়াশি সেই অভিযানের মুখে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকে পেশা বদল করে ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন। তবে তাতেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ ঠিকই তাদের পাকড়াও করেছে। ওদের মধ্যে অন্তত ৩জন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহতও হয়েছিল।
ওই অভিযানের পূর্বে বগুড়ায় ছোট-বড় মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি তালিকা করা হয়েছিল। পুলিশের করা তালিকায় ৫০২জনকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আর র‌্যাবের তালিকায় নাম ছিল ২৫০জনের। তাদের মধ্যে অর্ধশত ব্যক্তিকে শীর্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অন্যদিকে সরকারের প্রভাবশালী দু’টি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বেশ ক’জনের নাম ‘মাদকের গডফাদার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই গডফাদাররা শেষ পর্যন্ত ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বলে স্থানীয় সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। অবশ্য তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল আত্মগোপন করায় গডফাদারদের ধরা যাচ্ছে না।
সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) বগুড়া জেলা শাখার সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই শুনছিলাম যে নির্বাচনের পর সরকার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও শক্ত পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে, সুন্দর একটি সমাজ গড়তে হলে সরকারকে এসবের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। তবে অতীতের মত এবার যেন গডফাদাররা ছাড় না পায় সে দিকটি অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে। যদি এবারও তারা আড়ালেই থেকে যায় তাহলে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েই জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হবে।’
জানতে চাইলে পুলিশের গণমাধ্যম শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সব সময় জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে। নতুন করে অভিযান শুরুর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অচিরেই বগুড়ায় নতুন করে অভিযান শুরু হবে।’