রশিদুল হত্যাকাণ্ডে শঙ্কিত বগুড়ার স্বেচ্ছাসেবীরা

অসীম কুমার কৌশিক
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ১৩:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৬৯ বার।

বগুড়ায় স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে এক নিবেদিত প্রাণ ছিলেন রশিদুল ইসলাম। কিশোর গ্যাংয়ের হাতে তার মত পরীক্ষিত এক মানবদরদীর মৃত্যুতে জেলার স্বেচ্ছাসেবীরা রীতিমত শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কারণ অন্যকে (ভাগ্নে) বাঁচাতে যাওয়ার কারণেই খুনীরা তাকে টার্গেট করেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, সমাজের জ্ন্য ভাল কিছু করতে গিয়ে যদি এভাবে প্রাণ দিতে হয় তাহলে ভবিষ্যতে মানুষের কল্যাণে কাজ করার মত কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্বেচ্ছাসবেী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে রশিদুলের খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, অন্য অনেক হত্যাকাণ্ডের মত রশিদুলের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে সেটি আমাদের যুব সমাজকে একটি ভুল বার্তা দিবে।

রশিদুলের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি মোট ১৭টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রক্তদান থেকে শুরু করে যে কোন বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাঁর স্বভাবে পরিণত হয়েছিল। করোনাকালে বিভিন্ন সংগঠনের হয়ে তিনি যেমন কর্মহীনদের সহায়তা করেছেন তেমনি ব্যক্তিগতভাবেও রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। এমনকি নিজের মোটর সাইকেল বিক্রির টাকা দিয়েও মানুষের খাবার যুগিয়েছেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারী রশিদুল খুন হওয়ার ৫দিন আগে তাবলীগ জামাতের চিল্লা থেকে ফিরেছেন।

গত মঙ্গলবার দুপুর ২ টার দিকে রহমান নগরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রশিদুলের ভাগ্নে ও ভগ্নিপতিকে মারধর করতে থাকে কয়েকজন কিশোর। এসময় তিনি তার ভাগ্নে ও ভগ্নিপতিকে মারধর করতে দেখে প্রতিবাদ করে। এক পর্যায়ে কিশোরদের মধ্যে থেকে একজন পিছন দিক থেকে রশিদুলকে পাজরে ছুরিকাঘাত করে। পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মারা যান তিনি। এই ঘটনায় বুধবার সকালে তার স্ত্রী কেয়া খাতুন বাদী হয়ে ২ জনের নামে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যাদের নামে মামলা করা হয়েছে তারা হলো- সদর উপজেলার মাতলতিনগর এলাকার বাসিন্দা রুমেল ভুইয়ার ছেলে সামাইল মাহাদী ভুইয়া (১৯) ও সিয়াম (১৯)। সিয়ামের বাবার নাম পরিচয় অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্লাড ডোনেশন ক্লাবের মুখপাত্র সজীব বলেন, করোনাকালে অসহায় ও দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানো এবং করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের দাফন কাজেও সবসময় পাশে ছিলো রশিদুল। একজন সমাজসেবকের এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না আমরা।  তার অভাব কখনো পূরণ হবার নয়। রশিদুল প্রতি মাসে ১৮-২০ ব্যাগ রক্ত নিজেই জোগাড় করতো। এছাড়াও বিগত কয়েক বছর ধরে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের প্রতি মাসে রক্ত জোগাড় করে দিতো রশিদুল। আলোর দিশারী স্কুলের এতিম বাচ্চাদের একজন ডোনারও ছিলো সে। সমাজে একজন স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তোলা খুবই কষ্টকর।

বিডি ক্লিন বগুড়ার মুখপাত্র কেএম মাহাবুব আলম জিওন জানান, রশিদুল শুধু ভালোই ছিলো না, সে ভালোর মধ্যেও ভালো। বিভিন্ন দুর্যোগকালীন মুহুর্তে বিপর্যস্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে কখনো পিছপা হয় নি সে।

আলোকিত ফেসবুক গ্রুপের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘দারুণ কষ্ট পাচ্ছি। চোখের সামনে বড় হওইয়া একজন সাহসী, সৎ ও নিষ্ঠবান ঈমানদার মুসলমান পুত্র সমতুল্য রশিদুলের জন্য। বহু স্মৃতি, বহু কথা তার সাথে আমার। সারারাত মনে হয় রশিদুল আজ আমার সাথেই কথা বলছিলো। আর কেও আমাকে বলবে না, বড় ভাই ঈদের দিনে ঈদগাহে আমি প্রথম কাতারে বসে এবারেও আপনার সাথে নামাজ পড়বো।‘

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) রেজাউল করিম রেজা জানান, রশিদুল হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডে এখনও কাউকে আটক করা যায়নি। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।