পেন্টা থেকে হেক্সা: অনবদ্য-অনিন্দ্য ব্রাজিল

জুবায়ের হাসান:
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০১৮ ১৪:২৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১১৮৪ বার।

পেন্টা থেকে হেক্সা অর্থাৎ পাঁচ থেকে ছয়। ব্রাজিল ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপ জিততে চায়। এজন্যই বলা হচ্ছে ব্রাজিলের ‘হেক্সা মিশন’। ব্রাজিল পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম দেশ। এর আয়তন ভারতের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। আমাদের দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত। উত্তরে হিমালয় পর্বত ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থাকায় এমনটা হতে পেরেছে। কিন্তু ব্রাজিলের প্রধান নদী আমাজান পশ্চিমের আন্দিজ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বের উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। অর্থাৎ ব্রাজিলের প্রধান নদী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে। আমাজান পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। তবে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রশস্ততম নদী। নদীটি সাগরের যে স্থলে সঙ্গম করেছে (মোহনায়), সেখানেও এর প্রশস্ততা বিস্ময়করভাবে প্রায় ৮০ কি. মি. চওড়া। আমাজানের এই প্রাকৃতিক প্রশস্ততা বুঝি ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের এতটা বিশালত্ব দান করেছে।

ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের কোথায়-কিভাবে এই বিশালত্ব খুঁজে পেলাম সে কথায় এবার আসছি। আমাজান নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর বিখ্যাত বৈচিত্রময় বনভূমি ‘আমাজান ফরেস্ট।’ এই বনে বাস করে বাঘ আকৃতির সুবিশাল প্রাণী কালো-সাদায় ডোরা কাটা ‘জাগুয়ার’। ক্ষিপ্রগতির জাগুয়ারের দৈর্ঘ্য লেজ ছাড়াই প্রায় ২২ মিটার। একের পর এক আক্রমণ করেও নাভাসকে  (কোস্টারিকার গোলরক্ষক) ধরাশায়ী করা যাচ্ছিল না। শিকার যখন প্রায় হাতছাড়া হতে যাচ্ছিল, তখনই আমাজান থেকে বেড়িয়ে আসা জাগুয়ারের ন্যায় ক্ষিপ্রগতিতে শিকার করলেন কুটিনহো (৯১ মিনিটে)। বেলুনে পেরেক ঠুকলে ফটাশ করে ফেটে যায়। কুটিনহো’র (জার্সি ন-১১) গোলে কোস্টারিকাও যেনো ফেটে গেল প্রচ- শব্দে। এর প্রমাণ শেষ বাঁশি বাজার আগে আরেকটি গোল করলেন নেইমার (ব্রাজিল-২: কোস্টারিকা-০, ২২-০৬-১৮)। 

ব্রাজিলের এই জয়টাকে বিশাল বলছি না। বিশালত্বটা অন্যখানে। যে দেশে বন্য জাগুয়ার আছে,সে দেশের খেলোয়াড়দের বিজয় উদযাপনের অভিব্যক্তি ওই জানোয়ারের মত হত পারতো। যেমনটা সার্বিয়ার খেলোয়াড়রা করে থাকেন। গোল করার পর কানের পাশে হাতের তালু ভাঁজ করে এবং মুখ দিয়ে লম্বা জিহবা বের করে উল্লাস প্রকাশ করা। এমন উল্লাস ভঙ্গির মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করা হয় যে, বিজয়ী গোলদাতা একজন ভয়ঙ্কর বাঘ-ভাল্লুক-নেকড়ে জাতীয় শিকারি জানোয়ার (সার্বিয়া-১: সুইজারল্যান্ড-২, ২২-০৬-১৮)। আমাদের দেশের দর্শকবৃন্দের কাছে এই জাতীয় বিজয় অভিব্যক্তি খুবই ঘৃণিত ও নিন্দনীয়। হিংস্র জাগুয়ার দেশে থাকা সত্ত্বেও ব্রাজিলীয় ফুটবলারদের বিজয় অভিব্যক্তি এমন ধরনের নয়। তাদের আনন্দের ব্যপ্তিতে আছে শালীনতা ও মধুময় শৃঙ্খলতা। এখানেই খুঁজে পেয়েছি ব্রাজিলের বিশালত্ব।কোস্টারিকার বিপক্ষে ব্রাজিল খেলেছে অসামান্য দৃষ্টি নন্দন! বর্তমান ব্রাজিল দলটা বেশ কম্প্যাক্ট। তারা চাইবে না অন্য কোন দল তাদের সামনে ‘লুঙ্গি ড্যান্স’ করুক। বরং তারাই দর্শক মাতাবে চিরাচরিত ‘সাম্বা ড্যান্স’ দিয়ে।