প্রতিষ্ঠান প্রধানদের গাফিলতি

শূন্য পদের ভুল তথ্যের ঝামেলা পোহাচ্ছে এনটিআরসিএ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারী ২০১৯ ১২:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩২ বার।

নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের ভুল তথ্য দেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে শত শত প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে। আর এ ভুল তথ্য নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ)। এর আগে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এনটিআরসিএর সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকরা মাসের পর মাস ভোগান্তিতে ছিলেন। এবারও কতিপয় হাইস্কুল-কলেজ ও মাদরাসার প্রধানরা ইচ্ছা ও অনিচ্ছা দুইভাবেই শূন্যপদের ভুল তথ্য দিয়েছে। অনুসন্ধানে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করে এনটিআরসিএ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শূন্য পদের চাহিদা পাঠানোর সময় দেয়া হয়েছিলো। আর কোনও প্রতিষ্ঠান ভুল তথ্য পাঠালে তা সংশোধনের ব্যবস্থা করা, জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ অনুসরণ করে তথ্য প্রেরণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাঠানো তথ্য যাচাই করতে বলা হয়েছিলো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের। এরপর দুই দফায় বাড়ানো হয় শূন্য পদের চাহিদা পাঠানোর সময়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর চাহিদা পাঠানোর সময় শেষ হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত দেয়া হয় শূন্য পদের তথ্য সংশোধনের সুযোগ। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান তখনও শূন্য পদের চাহিদা সংশোধন করেননি তাদের তালিকা ৬ অক্টোবরের মধ্যে এনটিআরসিএতে পাঠাতে বলা হয়েছিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের।

এত কিছুর পরেও শূন্য পদের চাহিদার ভুল তথ্য দিয়েছেন অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান। নিবন্ধিতদের নিয়োগ সুপারিশের আবেদন গ্রহণ শুরু হওয়ার পর শূন্য পদের চাহিদার তথ্য সংশোধন করতে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান এখন ভীড় করছেন রাজধানীর ইস্কাটনের এনটিআরসিএ অফিসে। এরফলে নিয়োগের সুপারিশ কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে বিড়ম্বনা। শূন্য পদের চাহিদা সংশোধনের জন্য বিলম্বিত হতে পারে নিয়োগের সুপারিশ কার্যক্রম। দৈনিক শিক্ষাকে এমন তথ্যই জানিয়েছে এনটিআরসিএ সূত্র।   

সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারণে ভুল হয়েছে বলে দাবি করছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। তাদের গাফিলতিতে ভুল হয়েছে। শূন্য পদের তালিকা তারা নিজেরা পাঠাননি এবং অনলাইনে চাহিদা পাঠানোর বিষয়টি ঠিকমত তদারকি করেননি। এগুলো সংশোধন করা না হলে সুপারিশপ্রাপ্তরা বিড়ম্বনার শিকার হবেন। একারণে তথ্য সংশোধন করতে গিয়ে বিলম্বিত হতে পারে নিয়োগের সুপারিশ। 

শূন্য পদের চাহিদা সংশোধনে এনটিআরসিএ কার্যালয়ে এসেছিলেন ত্রিপল্লী শেখ আবু নাসের নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃনাল কান্তি ঢালী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি বিষয়ের একটি পদ শূন্য রয়েছে। কিন্তু একজন সহকারী শিক্ষক অনলাইনে শূন্য পদের চাহিদার তথ্য প্রেরণের সময় ভুল করে বাংলা, বিজ্ঞান এবং ইংরেজি তিনটি বিষয়ে শূন্য পদের চাহিদা দিয়েছেন। অনলাইনেও তা প্রদর্শন করছে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেছিলেন কি না জানতে চাইলে মৃনাল কান্তি ঢালী বলেন, প্রথমে সংশোধনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে যাওয়ার পরে তারা সাহায্য করতে পারেনি। তাই ঢাকায় এনটিআরসিএ কার্যালয়ে এসেছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা  বলেন,  অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান ভেবেছেন এনটিআরসিএর হাতে নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতা থাকবে না নতুন বছরে। তখন নিজেদের পছন্দের লোকদের টাকার বিনিমিয়ে নিয়োগ দিতে পারবেন। আবার কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান প্রধান ভেবেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় না-ও আসতে পারে। যদি সেরকম হয় তাহলে এনটিআরসিএর সুপারিশের ক্ষমতা খর্ব করা হতে পারে। শূন্যপদের ভুল তথ্য দেয়ার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে এ দুটিকে অন্যতম হিসেবে দাবি করেছেন মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা। 

বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে গত ১৮ ডিসেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছ এনটিআরসিএ। গত ১২ জুন যাদের বয়স ৩৫ অথবা তার কম এবং জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী অন্যান্য শর্ত পূরণ করবে শুধু তারাই আবেদন করতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে আবেদন করা শুরু করেন নিয়োগ প্রত্যাশীরা। ২ জানুয়ারি শেষ হয় আবেদনের সময়। চলতি জানুয়ারি মাসেই নিয়োগের সুপারিশ প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল এনটিআরসিএ।সূত্র দৈনিক শিক্ষা