রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮: ভিএআর’এর ব্যবহার সুষ্ঠভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ

বিবিসি অনলাইন:
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০১৮ ১২:৪৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৮৯ বার।

এবারের বিশ্বকাপে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি নিয়ে সবচেয়ে বেশী বিতর্ক হয়েছে সোমবার রাতে।পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের ভাষায়, সেম্যাচে পরিস্থিতি 'একটু অদ্ভূত' মোড় নিয়েছিল। বি গ্রুপের দুই ম্যাচে চারবার রেফারি মাঠের পাশের ক্যামেরায় সিদ্ধান্ত পুন:র্যাচাই করতে যান। কাকতালীয়ভাবে, দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুই স্টেডিয়ামেই ৯২'তম মিনিটে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন দুই রেফারি। শেষপর্যন্ত পর্তুগাল ইরানের সাথে ১-১ গোলে ড্র করে আর স্পেনের সাথে মরক্কো ড্র করে ২-২ গোলে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের পর্ব নিশ্চিত করে স্পেন আর দ্বিতীয় হয় পর্তুগাল।

কেন তৈরি হলো বিতর্ক?

ভিএআর'এর তিনটি সিদ্ধান্তই হয় সারান্সকে, যে ম্যাচে পর্তুগাল শেষ মুহুর্তে গোল খেয়ে জয়বঞ্চিত হয়।

  • পর্তুগাল পেনাল্টি - ১-০ গোলে এগিয়ে থাকার সময় ইরানের সায়েইদ এযাতোলাহি পেনাল্টি বক্সে ধাক্কা দেন রোনাল্ডোকে। তখন খেলা চালিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ পর মাঠের রেফারি এনরিকে কেসেরেস সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। রেনালদোর পেনাল্টি শট ঠেকিয়ে দেন ইরান গোলরক্ষক।
  • রোনাল্ডোর হলুদ কার্ড - দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে বল দখলের লড়াইয়ের একপর্যায়ে রোনাল্ডোর ডান হাতের আঘাত লাগে মোর্তেজে পওরালিগাঞ্জির মুখে। রিভিউ করে ফাউলের জন্য রোনালদোকে হলুদ কার্ড দেয়া হয়, যা অনেকের মতে লাল কার্ড হতে পারতো।
  • পর্তুগালের দাবী প্রত্যাখ্যান - ইনজুরি সময়ে পর্তুগালের ডি বক্সে সরদার আজসউনের নেয়া হেড সেড্রিকের হাতে লাগলে পেনাল্টির আবেদন করে ইরান। রিভিউ শেষে তাদের দাবীতে সাড়া দেন রেফারি কেসেরেস। বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচ ড্র করে ইরান।
  • স্পেনের দ্বিতীয় গোল - যেসময় ইরানকে পেনাল্টি দেয়া হচ্ছিল, তখন স্পেন ২-১ গোলে পিছিয়ে। সেই মুহুর্তে ইয়াগো আসপাসের গোলে স্পেন সমতা আনলেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় স্পেনের গোল। রিভিউ'র পর অফসাইডের সিদ্ধান্ত বাতিল হয় ও স্পেন ২-২ গোলের ড্র'য়ে ম্যাচ শেষ করে।

আর এসব শুধু রিভিউ করা সিদ্ধান্তগুলোর বর্ণনা।

ম্যাচে একবার একসাথে দুই পা ব্যবহার করে ট্যাকেল করেও সৌভাগ্যবশত পার পেয়ে যান স্পেনের জেরার্ড পিকে। রিভিউ করা হলে ঐ ট্যাকেলের জন্য লাল কার্ডও দেখানো হতে পারতো তাকে।

পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুর দিকে সরদার আজমাউনকে বক্সের ভেতরে ফাউল করা হয়। সেযাত্রা ইরান একটি পেনাল্টিও পেতে পারতো।

পক্ষপাতের অভিযোগ

ভিএআরের বিতর্কি সিদ্ধান্তের মাশুল পর্তুগালকে দিতে হলেও ম্যানেজার সান্তোস মনে করেন প্রযুক্তিটি 'নিজের কাজ করেছে'।

তিনি বলেন, "আমি সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে মাথা ঘামাইনি। আমার কাছে সেটিকে ম্যাচেরই একটি অংশ মনে হয়েছে। রেফারি'র যা করার ছিল তিনি তা করেছেন এবং আমাদের সেটিই মেনে নিতে হবে।"

তবে নিজের দল রিভিউ থেকে লাভবান হলেও ইরানের ম্যানেজার কার্লোস কুইরোজের মতে ভিএআর 'খুব একটা ভাল যাচ্ছে না'।

রোনাল্ডোকে লাল কার্ড না দেয়ার সমালোচনা করেছেন কুইরোজ। তিনি বলেছেন, "ভিএআর'এর জন্য আপনি খেলা থামিয়ে যখন দেখা গেল যে কনুই ব্যবহার করা হয়েছে, তখনউ লাল কার্ড দেয়া উচিৎ ছিল। আইনে বলে, কনুই চালানোর শাস্তি লাল কার্ড। নিয়মে কোথাও বলা নেই যে মেসি বা রোনাল্ডো এরকম অপরাধ করলে কম শাস্তি হবে।"

"সবার কাছেই সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা একইরকম হওয়া উচিৎ। আর এমুহুর্তে আমার সবাই একমত যে ভিএআর খুব একটা ভালভাবে কাজ করছে না। অনেক অভিযোগ রয়েছে এর সম্পর্কে।"

"ফিফার কাছে আমরা এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম তবে তারা কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আমরা জনাতে চাই কারা আমাদের ম্যাচের রেফারি থাকবেন এবং ম্যাচ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন, এটা জানতে চাওয়ার অধিকার আছে আমাদের।"

প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর মরক্কোর নক আউট রাউন্ডে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকলেও ভিএআরের সিদ্ধান্তের কারণে স্পেনের সাথে ড্র করায় নিজেদের অন্যায়ের শিকার বলে মনে করছে তারা।

মরক্কোর ওয়েবসাইট হেসপ্রেসকে গোলরক্ষক মুনির মোহাম্মদ বলেন, "গত ম্যাচে এই ভিএআর সহায়তা প্রয়োজন ছিল আমাদের। পর্তুগালের গোলের আগমুহুর্তে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।"

"আমাদের সাথে নিরপেক্ষ আচরণ করা হয়নি। সেসময় ভুল হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে তারা ভিএআর এর সহায়তা নেয়নি। তাই আমরা পরে অভিযোগ করেছিলাম।"

মরক্কোর মিডফিল্ডার ফায়সাল ফাজর যোগ করেন, "পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচে আমাদের স্বার্থে ভিএআর ব্যবহার করা হয়নি। স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচে সেটি আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। তা স্বত্তেও আমরা কোনো ধরণের অজুহাত দিচ্ছি না।"