করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভোট নিয়ে নাগরিকরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে

বগুড়া পৌর নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার যুদ্ধে সম্ভাব্য প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২০ ১৪:২৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৯১ বার।

শীত না আসতেই বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ আবার উর্ধ্বমুখী। কিন্তু তা সত্ত্বেও বগুড়ায় পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখনই মাঠে নামতে শুরু করেছেন। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নিজেদের প্রার্থীতার কথা ভোটারদের জানাতে কেউ কেউ তো রীতিমত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে প্রচার যুদ্ধে নেমেও পড়েছেন। 
মেয়র পদে দলীয় এবং স্বতন্ত্র মিলে অর্ধডজনেরও বেশি প্রার্থীর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। এছাড়া কাউন্সিলরের ২১টি পদে দুই শতাধিক এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলরের ৭টি পদে আরও অর্ধশত নারী তৎপর রয়েছেন। তবে আগাম এই প্রচারের ক্ষেত্রে দলগতভাবে শাসক দল আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরাই এগিয়ে রয়েছেন। এরই মধ্যে মেয়র পদে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থীতাও চুড়ান্ত করা হয়েছে। এছাড়া কাউন্সিলর পদে আগ্রহীদের কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং জমা নেওয়া হয়েছে । 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেয়র পদে মনোনয়নের বিষয়টি  যেহেতু দলের নীতিনির্ধারী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয় জড়িত- সে কারণে শাসক দল আওয়ামী লীগ স্থানীয়ভাবে কাউকে ওই পদে আগাম প্রার্থীতা ঘোষণা করতে পারছে না। আর ওই একই কারণে দলটির নেতা-কর্মীরা মেয়র পদে এককভাবে কারও প্রচারেও নামতে পারছেন না। অবশ্য দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে আওয়ামী লীগের শহর কমিটির প্রাক্তন এক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিয়মিত সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। 
তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনাকালে নানা সংকটে জর্জরিত সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে পৌরসভার নির্বাচন তেমন একটা আগ্রহ নেই। কারণ করোনার সংক্রমণ আবার উর্ধ্বমুখী। গেল ক’দিন আগে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ২০ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর মধ্যে যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অথব আগের তুলনায় আয়-রোজগার কমে গেছে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। তাছাড়া শীতের শুরুতেই করোনার সংক্রমণ কিছুটা উর্ধ্বমুখী হওয়ায় সচেতন নাগরিকরা ভরা শীতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ভোট দেওয়া নিয়ে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব রয়েছেন।
প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেড় শ’ বছরের প্রাচীন বগুড়া পৌরসভায় সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান ১ লাখ ৮ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু পেয়েছিলেন ৪৯ হাজার ভোট। তবে মেয়র পদে জয় না পেলেও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরা বিএনপি সমর্থকদের পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গতবারের মত এবারও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
এবার মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বাদশা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু, জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন, শ্রমিক লীগ নেতা সামছুদ্দিন শেখ হেলাল, জেলা যুবলীগ সভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন, বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হাসান ববি ও আওয়ামী লীগের শহর কমিটির সাবেক নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা রেজাউল করিম বাদশা দলীয়ভাবে এবং সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ ব্যক্তিগতভাবে ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। 
বেসরকারি একটি সংস্থায় কর্মরত শহরের শিববাটি এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেনের কাছে পৌর নির্বাচনের কোন গুরুত্ব নেই। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘মহামারি করোনার কারণে লোকসানের কথা বলে আমাদের আমাদের বেতন কমানো হয়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন ভোট নিয়ে ভাবার সময় নেই।’ নুসরাত জেসমিন ভরা শীতে ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কথা জানিয় বলেন, ‘বগুড়ায় করোনার সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। যখন ভোট হবে তখন তো ভরা শীত। সে সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই এবার ভোট কেন্দ্রে যাব কি’না তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছি।
মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত বগুড়া শহর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক চৌধুরী হিরু জানান, মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে গেল মাসে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের গোপন ব্যালটে ভোট গ্রহণ করা হয়। সেখানে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ায় তাকেই দলীয় প্রার্থী বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। হামিদুল হক চৌধুরী হিরু বলেন, সাধারণ ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড মিলে কাউন্সিলরের ২৮টি পদে দলের মোট ৯৬ নেতা-কর্মী আবেদন ফরম উত্তোলন করে জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী বাছাই করা করা হবে। 
অন্যদিকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীতার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির শহর কমিটির সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন জানান, তারা মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঝে ফরম বিতরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে মেয়র পদে একক নাম পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। আমরাও সেই অনুযায়ী একক নাম ঢাকায় পাঠানোর চেষ্টা করবো। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সর্বোচ্চ ৩টি নাম পাঠাবো। তারপর কেন্দ্র প্রার্থীতা চুড়ান্ত করবে।’