বাদশার স্বপ্ন বোনেন তাঁর স্ত্রী-কন্যা !

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৫৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৩৪ বার।

প্রান্তিক কৃষক বাদশা আলম। নিজের ও বর্গা নেওয়া অল্প কিছু জমিতে চাষাবাদ করেন তিনি। চলতি মৌসুমে ১৪শতক জমিতে আলু চাষ শুরু করেছেন বাদশা আলম। এরজন্য তিনি জমিতে হালচাষ করেছেন। শনিবার ওই জমিতে বাদশার সঙ্গে স্বপ্ন বোনেন তাঁর স্ত্রী শ্যামলী খাতুন ও মেয়ে বর্ণা খাতুন। কৃষক বাদশা আলম বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদরের পাকুড়িহাটা গ্রামের বাসিন্দা। সে পৈত্রিক সূত্রে কৃষক পরিবারের সন্তান। মা-বাবার মুখে তিন পুরুষের গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের গল্পশোনা বাদশার ভাগ্য নির্ভর করে ক্ষেতের ফসল থেকে। আর এ কারণে কৃষি খাতের হার না মানা এক যোদ্ধা বাদশা আলম। তবে কৃষিখাত তার ভাগ্য ফেরাতে পারেনি। পূর্ব পুরুষদের কাল থেকে নিজেদের জমির পরিমান দিনে দিনে কমে এসেছে।

নিজের সামান্য জমি চাষাবাদ করে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বাদশা আলম। এজন্য অন্যের জমি বর্গা নিয়েও চাষাবাদ করেন তিনি। সময় আর প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয় তাকে। চলতি মৌসুমে নিজের ১৪ শতক জমিতে আলু চাষের সিদ্ধান্ত নেয় বাদশা আলম। চাষাবাদের জন্য প্রয়োজন কৃষি শ্রমিক। কিন্তু কৃষি শ্রমিক নেওয়ার মত তাঁর আর্থিক সামর্থ্য নেই। গত সপ্তাহে ওই জমিতে হালচাষ করেন নিজেই। শনিবার সকাল থেকে আলু রোপন শুরু করা হয়। জমিতে কোদালে দাগ কেটে যাচ্ছেন কৃষক বাদশা আলম। ওই দাগের উপর নির্ধারিত দুরুত্ব রেখে সারিবদ্ধ ভাবে আলু বুনে যাচ্ছেন তার স্ত্রী শ্যামলী খাতুন ও মেয়ে বর্ণা খাতুন। এভাবেই বাদশার আলু চাষে আর্থিক লাভের স্বপ্ন বোনেন তার স্ত্রী ও কন্যা।

বাদশার টিনের ঘরের রাণী হয়ে এসেছিলেন শ্যামলী। তিনি এখন দু’সন্তানের জননী। গৃহস্থলী কাজের পাশাপাশি চাষেবাদে স্বামীর অন্যতম সঙ্গী। বড় মেয়ে বর্ণা খাতুন এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী। করোনাকালে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় লেখাপড়ার চাপ নেই তার। এজন্য বাবার আলু চাষের কাজে মায়ের সাথে সেও কাজ করছে আনন্দে।

মাথার ঘোমটায় মুখটা আড়াল করে শ্যামলী খাতুন বলেন সংসারতো তাঁর (বাদশা) একার নয়, সংসার আমারও। সংসারের জন্যই যেহেতু চাষাবাদ করা হয়, এজন্য চাষের কাজে হাত লাগাতে খারাপ লাগে না। বরং নিজের কাজ নিজেরা করি, এজন্য ভালো লাগে। মেয়েটাও আজ নতুন নয়, যখন যে কাজে পারে আমাদের সাহায্য করে।

কৃষক বাদশা আলম বলেন, চাষের জন্য কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। শ্রমিক নিয়ে কাজ করলে চাষের ব্যয় বাড়ে। নিজেদের আর্থিক সামর্থও কম। এজন্য নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হয়। এক প্রশ্নের জবাবে বাদশা বলেন পরিবারের সদস্যরা সাথে কাজ করলে আনন্দ লাগে। এক সঙ্গে নিজেদের প্রয়োজনীয় কথাও বলা যায়, আনন্দের সাথে কাজও করা যায়। আলুর ফলন ভালো হলে এবং বাজারে আলুর ভালো মূল্য পেলে আমাদের স্বপ্ন সত্যি হবে।