দিল দিল ব্রাজিল : ঠেকাও ব্রাজিল!

জুবায়ের হাসান:
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৫:০৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৭৫ বার।

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের দ্বান্দ্বিকতা, বিভাজনের দেখা মিললো গহীন গ্রামেও। বগুড়া শহর থেকে ৪০কি.মি.দূরের এক গ্রাম মাজিন্দা। মেক্সিকোর বিপক্ষে ব্রাজিলের জয় শেষে (০২-০৭-১৮) দেখতে পেলাম সমর্থকদের বিরাট মিছিল। পটকার বিকট আওয়াজ। সর্বত্র আনন্দঘন পরিবেশে খানাপিনার ধুম। দিল দিল ব্রাাজিল!
আর্জেন্টিনার সমর্থকরা কোনরূপ লুকোচুরি, রাখঢাক না করে মেক্সিকোকে সমর্থন করেছে। ছাই চাপা আগুনের মত ক্ষোভ-ব্রাজিল ঠেকাও! ২ জুলাই এবং ৩ জুলাই- এই দুই রাতে একেবারে গ্রামীণ পরিবেশে দ্বিতীয় রাউ-ের নকআউট পর্বের মোট চারটি খেলা দেখলাম। ৭ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থীর সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে বিশ্বকাপ সংক্রান্ত খোলামেলা আলাপচারিতায় লিপ্ত থাকলাম। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থক সংখ্যা প্রায় সমান সমান। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মধ্যে গভীর নিরাশা কাজ করছে। এরা কিছুতেই ব্রাজিলের হেক্সা জয় দেখার জন্য প্রস্তুত নয়। এসব তরুণ-তুর্কিদের মনোজগতে বাসাবাধা তীব্র প্রতিশোধ স্পৃহা আমাকে ব্যথিত ও আতঙ্কিত করেছে। নিজে না পারলেও অপরের অগ্রযাত্রাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়ার বাসনায় লজ্জিত হয়েছি।
কোন দলটি ব্রাজিলকে ঠেকিয়ে দিবে? আজ রাত বারোটায় কোয়ার্টার ফাইনাল খেলায় মুখোমুখি ব্রাজিল-বেলজিয়াম। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ সারির দল। শ্রেষ্ঠ তকমা লাগানো বড় দলের সুবিধাটা হল তারা শুধু ‘ধারে কাটে না, ভারেও কাটে।’ ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছার আগ পর্যন্ত ৪টি ম্যাচের ৩টিতে জয় পেয়েছে ও ১টিতে ড্র করেছে। ৭টি গোল বিপক্ষের জালে জড়িয়েছে আর খেয়েছে মাত্র ১টি গোল। কোন ম্যাচেই আগে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়েনি তবে হেসে খেলে কোন ম্যাচে জয়ও পায়নি। জয় পাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হয়েছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। শেষতক ব্রাজিলের দুর্বলতাগুলো অনুচ্চারিত থেকেছে। পাছে মিডিয়ার রিডারশিপ কমে যায় এই ভয়ে।
বেলজিয়ামের বিপক্ষ ব্রাজিলের দুর্বল দিক হলো তাদের মাঝ মাঠ। ব্রাজিল দলের স্টিয়ারিং ক্যাসোমিরো (জার্সি নং-৫) আগের দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখায় আজ মাঠের বাইরে থাকবেন। এই দুঃসংবাদ ব্রাজিলকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। গত চারটি খেলায় ব্রাজিলিয়ান রক্ষণভাগে দেখা মিলেছে ৪টি পিলার: দুইজন সেন্টার ব্যাক থিয়াগো সিলভা (জার্সি নং-২, ও মিরান্দা (জার্সি নং ৩)। দুইজন রাইট ব্যাক ও লেফট ব্যাক যথাক্রমে ফাগনার (জার্সি নং-২২) ও মার্সেলো (জার্সি নং-১২)। চতুষ্টয় স্তম্ভের কারণে গত ৪টি ম্যাচে ব্রাজিল মাঝ মাঠ দিয়ে অবলীলায় তাদের রক্ষণভাগে বল আসতে দিয়েছে। কিন্তু দুর্গ ভেদ করতে দেয়নি।
কিন্তু এই কৌশল কি বেলজিয়ামের বিপক্ষে কার্যকরী হবে? বেলজিয়ো মাঝ মাঠের খেলোয়াড় ক্যারাসকো (জার্সি নং-১১) ও মিউনিয়ে (জার্সি নং-১৬) বাম ও ডান প্রান্ত থেকে যেসব ক্রস করবেন সেসব থেকে রোমেলু লুকালু (জার্সি নং-৯) হেড দিয়ে ফায়দা লুটতে চাইবেন। এডেন হ্যাজার্ড (জার্সি নং-১০)-এর সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর অভ্যাস। তাঁর ডিফেন্স চেরা লম্বা থ্রু পাসগুলো ক্লিনিকাল হয়ে উঠতে পারে। এসবকে ব্রাজিলের চার পিলার কতটুকু সামলাতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। বেলজিয়ামের এই দলটাকে বলা হয় সোনালী প্রজন্মের দল। ২০১৬ সালে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ১ নম্বর দল ছিল। বর্তমান পারফরম্যান্স এই বিশ্বকাপসহ টানা ২৩ ম্যাচে অপরাজিত। আধুনিক টোটাল ফুটবলের জনক হল্যান্ড ভাল খেলেও যা করে দেখাতে পারেনি, বেলজিয়াম কি তা পারবে? বেলজিয়ামের একটা পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
ব্রাজিলের শক্তিমক্তা-কৌশল সম্পর্কে নতুন করে আর গুণকীর্তন করার প্রয়োজন অনুভব করছি না। সেদিকে না গিয়ে নেইমারের নাটুকেপনা সম্পর্কে কিছু বলতেই হয়। অভিনয় ও ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল’ খেলার ও যুদ্ধের অন্যতম একটা কৌশল। নেইমার এটা করতেই পারেন। গত ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি মাঠের বাইরে গেলেন। এবারে কোন ডিফেন্ডারের দ্বারা আহত যেন না হন সেজন্যই এই বাড়তি পূর্ব সতর্কতা। নেইমারের গায়ে ছোঁয়া লাগলে লাল কার্ড খেতে হবে-এটার দিকেই রেফারিকে আকর্ষিত করতে চাওয়া হয়েছে। কারণ নেইমার জানেন- রেফারি একজন মানুষ, সোফিয়া নিশ্চয় নন। তাছাড়া ‘ফার্স্ট ক্যাজুয়ালটি অফ এ্যা ওয়ার ইজ ট্রুথ- অর্থাৎ যুদ্ধে প্রথমেই নিহত হয় সত্য।”