ঘটনাস্থল দক্ষিণ ঠনঠনিয়া ও ইয়াছিন নগর

বগুড়ায় বিকল্প সঞ্চালন লাইন নির্মিত হলেও আবাসিক এলাকা থেকে ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদুতিক লাইন অপসারণ করছে না নেসকো

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারী ২০১৯ ০৫:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৭ বার।

বসত-বাড়ির ওপরে থাকা ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কারণে বগুড়া শহরের দক্ষিণ ঠনঠনিয়া ও ইয়াছিন নগরের প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা প্রচ- ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এরই মধ্যে বাড়ির ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে কয়েক বছর আগে রিপন নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
ঝুঁকিপূর্ণ ওই সঞ্চালন লাইন অপসারণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রায় ৪ মাস আগে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু তার পরেও আজ পর্যন্ত সেটি অপসারণে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় পাঁচ বছর আগে বিকল্প সঞ্চালন লাইন স্থাপন এবং তাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও আগের সঞ্চালন লাইন অপসারণ করা হচ্ছে না। যে কারণে তারা একদিকে যেমন মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তেমনি শহরের বাসিন্দা হয়েও বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করতে পারছেন না।
নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডর (নেসকো) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় তিরিশ বছর ১৯৮৮ সালে শহরের রহমাননগর ফিডার (বিদ্যুৎ বিভাগের একটি স্থাপনা) থেকে পশ্চিমে ছিলিমপুরের দিকে যখন সঞ্চালন লাইনটি স্থাপন করা হয় তখন দক্ষিণ ঠনঠনিয়া ও ইয়াছিন নগরে কোন বসতবাড়ি ছিল না। কিন্তু গেল বিশ বছরে শহর সম্প্রসারিত বিশেষ করে ২০০৫ সালে পৌরসভার আয়তন বৃদ্ধির ফরে ওই এলাকায় একের পর এক বসত-বাড়ি নির্মিত হতে শুরু করে এবং দিন দিন তা বাড়তে বাড়তে এখন এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
দক্ষিণ ঠনঠনিয়া’র বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, দক্ষিণ ঠনঠনিয়া ও ইয়াছিন নগরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের নিচে অন্তত ৫০০ বসত-বাড়ি নির্মিত হয়েছে। এসব বসত-বাড়িতে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। তবে কেউ সর্বোচ্চ দুই তলার বেশি উঁচু বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। এমনকি সঞ্চালন লাইন এতটাই নিচ দিয়ে টানানো হয়েছে যে টিনের চালায় উঠে কাপড় শুকাতে দিতে গিয়েও অনেকে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকা রিপন নামে এক কলেজ ছাত্র কাপড় শুকাতে দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পর্শে নিহত হয়েছেন। এছাড়া বেশ কয়কজন আহতও হয়েছেন।
 কোরবান আলী নামে অপর এক বাসিন্দা জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে রহমাননগর সাব স্টেশন থেকে ছিলিমপুর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য শহরের দক্ষিণে বনানী হয়ে ফুলতলা-শাকপালা হয়ে ছিলিমপুর পর্যন্ত বিকল্প সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়। এমনকি তাতে বিদ্যুৎ সরবরাহও করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও পুরানো সঞ্চালন লাইনটি অপসারণ করা হচ্ছে না। ফলে তাদেরকে ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। ওই এলাকায় অবস্থিত জবানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর জাহান বেগম জানান, ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি তার স্কুলের পাশ দিয়েই চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার অনেক শিক্ষার্থী এসে বলে তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা টিনের চালের ওপর কিংবা ছাদে কাপড় পর্যন্ত শুকাতে দিতে পারে না। এলাকাটি এতটাই ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে নিরাপত্তার স্বার্থে সেটি অপসারণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।’
বগুড়ায় নেসকো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল, ওই এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং তাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথাও স্বীকার করেছেন। তাহলে পুরানো সঞ্চালন লাইন কেন অপসারণ করা হচ্ছে না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শহরের বনানীর দক্ষিণে লিচুতলা এলাকায় তাদের নতুন একটি ফিডার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত পুরানো সঞ্চালন লাইনটি অপসারণ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যদি পুরানো সঞ্চালন লাইন অপসারণ করি তাহলে পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ফলে আমাদেরকে নতুন ফিডার নির্মাণ না করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি নির্মিত হয়ে। তখন আর কোন ঝুঁকি থাকবে না।’