সিনেটর হিসেবে শপথ নিয়ে আমেরিকায় ইতিহাস বাংলাদেশির

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারী ২০১৯ ০৫:৫৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৯ বার।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান ও মুসলিম সিনেটর হিসেবে শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শেখ রহমান চন্দন। সোমবার জর্জিয়ার জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে শপথ নেন তিনি।

জর্জিয়ার স্টেট অ্যাসেম্বলিতে শেখ রহমান শুধু প্রথম মুসলিম সিনেটরই নন, ইউনাইটেড স্টেট অব আমেরিকার কোনও স্টেট থেকে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি স্টেট সিনেটরও তিনি ।

সোমবার সকালে অন্য সিনেটরদের সাথে ঐতিহ্য অনুযায়ী শপথ নেওয়ার পর কোরআন শরিফ নিয়ে শপথ নেন জর্জিয়ার প্রথম এই মুসলিম সিনেটর।

আমেরিকার কোনও স্টেটের সর্বোচ্চ আইন পরিষদ সদস্য (স্টেট সিনেটর) হয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশি হিসেবে ইতিহাস গড়ার পথে জর্জিয়া স্টেট সিনেটের ডিস্ট্রিক্ট-৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে মিডটার্ম ইলেকেশনে নির্বাচিত হন মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান নজিবুর রহমান ওরফে শেখ রহমান চন্দন।

গত ২২ মে অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে চার হাজার দুই ভোট পেয়ে জয়ী হন। প্রাইমারীতে চার চারবারের নির্বাচিত সিনেটর কার্ট থম্পসন পান ১ হাজার ৮৮৮ ভোট। আর ৬ নভেম্বরের নির্বাচনে শতভাগ ভোট (৩১, ৯০৫) পান তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। এর আগে ২০১২ সালে জর্জিয়া স্টেট রিপ্রেজেটিটিভ হিসেবে এবং ২০১৪ সালে স্টেট সিনেটর পদে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে অংশ নিয়েছিলেন শেখ রহমান। 

১৯৮১ সালে আমেরিকায় এসে নর্থ ক্যারোলিনায় লেখাপড়া করার সময়ে ডিশওয়াশারের কাজ করেন রহমান। আজকে তিনি স্বচ্ছল ব্যবসায়ী এবং ডেমোক্রেট পার্টির অন্যতম বড় দাতা। ১৯৯৫ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাবার পর জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিসিটি থেকে অর্থনীতি ও গ্লোবাল স্টাডিজে আন্ডার গ্র্যাজুয়েশন করেন। ২০০৮ সালে রাজনীতিতে জড়ান। যোগ দেন ন্যাশনাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, সিভিল লিবার্টি ইউনিয়ন ও ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জর্জিয়ায়।

তার বিজয়কে আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটির বিজয় অ্যাখ্যা দিয়ে শেখ রহমান চন্দন বলেন, আমেরিকায় আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটাকে কাজে লাগাতে আমাদেরকে মূলধারার রাজনীতি করতে হবে মন-প্রাণ দিয়ে। বাংলাদেশকে আমরা ভালবাসবো কিন্তু এখানে বাংলাদেশের রাজনীতি করবো না। আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হলে আমেরিকান রাজনীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে যেমন চলছে অন্যান্য কমিউনিটি।

শেখ রহমান আরও বলেন, অনেকে মূলধারার রাজনীতির নামে ফটো সেশনের যে রাজনীতি করেন তা দিয়ে সত্যিকার অর্থে কিছু অর্জন করা সম্ভব না। এসব লোক দেখানো তথাকথিত মূলধারার রাজনৈতিকরা কমিউনিটির মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এছাড়া অমুক এসোসিয়েশন তমুক সমিতি করে মূলধারার রাজনীতিতে কোন ভূমিকা রাখা যায় না। মূলধারা রাজনীতি করতে হলে তা করতে হবে সরাসরি।

বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করেন শেখ রহমান। কিশোর বয়সে (১৩ বছর) মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার কথা স্মরণ করে শেখ রহমান চন্দন বলেন, আমার বাবা ছিলেন ‘আগরতলা জয়বাংলা যুব শিবির’র ক্যাম্পের সুপারভাইজার। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিং নিত। আমার ভাই ও বোনও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু আমার বয়স কম হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি। 

শেখ রহমান বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছেন উপস্থিত থেকে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এবং এ নিয়ে তিনি গর্বিত।

স্বাধীনতার পর তার বাবা নজিবুর রহমান বাংলাদেশ রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বাবাকে ২০ বছর আগে হারালেও বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা তার সকল কাজ ও সাফল্যের অনুপ্রেরণা বলে জানান শেখ রহমান চন্দন।