লন্ডনের বার্তা পেলে নির্ধারণ হবে বিএনপির ভবিষ্যত?

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারী ২০১৯ ০৫:৩০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২০ বার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করতে লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে বিএনপি। সেখান থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা পরামর্শ আসার আগ পর্যন্ত নতুন সিদ্ধান্তগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন দলের বর্তমান নীতিনির্ধারকরা। অন্তত আগামী ছয় মাস তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক নির্দেশনা পর্যবেক্ষণ করার কথা ভাবছেন তারা।

গত কয়েকদিনে বিএনপির স্থায়ী ও কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত ১০ জন নেতা ও দলটির পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে কথা হয় । এর মধ্যে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বেশিরভাগ সদস্য মনে করেন, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার না করা, নির্বাচনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আশাবাদ এবং হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়গুলো নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে।

এসব ক্ষেত্রে তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা হয়েছে। এ কারণে তার কাছ থেকে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত আসার আগে নীতিনির্ধারকদের কেউ-ই স্বউদ্যোগে সিদ্ধান্ত নিতে চান না।

ইতোমধ্যে দলের ভেতর থেকে সংগঠন পুনর্গঠনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলেও তাকে ‘ট্র্যাডিশনাল’ ভাবনা হিসেবে দেখছেন দলটির অভিজ্ঞ নেতারা। কেন্দ্রীয় নেতা ও দলটির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে কৌশল নির্ধারণ নিয়ে ভুল হলেও তা সংশোধনের মাধ্যমে নতুন করে শুরু করতে হবে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। স্থায়ী কমিটির ১৬ জানুয়ারির বৈঠকেও বিষয়গুলো উঠে আসে। তবে এসব বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কাউন্সিল নিয়ে কথা উঠলেও কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, এখন কাউন্সিলের সময় নয়। গ্রেফতার নেতাকর্মীদের কারাগার থেকে বের করা ও কর্মীদের পাশে গিয়ে নেতাদের   দাঁড়ানোই এখন আসল কাজ। মানুষ নির্বাচনের বিষয়ে অবগত, সে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মানুষকে সব সময় সচেতন রাখতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘বিএনপি সংগঠন হিসেবে তো ঠিকই আছে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান মিলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে। ভোট দিতে দেয়নি মানুষকে। সেখানে বিএনপির কী দোষ, সংগঠন ঠিক আছে। আওয়ামী লীগ যেভাবে সহিংসতা করে, সেভাবে তো বিএনপি করবে না। সরকারের একতরফা নির্বাচনে বিএনপি জিতেনি।এই নির্বাচন তো নির্বাচন কমিশন করেনি। আমরা এখন বিরোধী দলের রাজনীতি করবো।’

গত ৩১ ডিসেম্বর স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে একজন সদস্য জোর দিয়েই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘এখন তারেক রহমানের কাজ হবে দলটি আমাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া। আমরা নিজেরা আলোচনা করে সামনের দিকে এগিয়ে নেবো। তার নির্দেশনা এলে আমাদের কাজ করার সুযোগ কম থাকে।’

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপিতে মূলত তিনটি ভাগ রয়েছে। একটি তৃণমূল, দ্বিতীয়টি সাংগঠনিক নেতৃত্ব— যেটি পুরোপুরি তারেক রহমানের নিয়ন্ত্রণে। তৃতীয়, রাজনৈতিক নেতৃত্ব— যেটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এই কমিটির পাঁচটি পদ শূন্য অবস্থায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশে সুশীল সমাজের একটি অংশের কাছে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের গ্রহণযোগ্যতা থাকায় শেষ পর্যন্ত তারেক রহমান তাদের ওপরই ভরসা করবেন, এমন প্রত্যাশা অবশ্য একাধিক নেতার।

এদিকে, দলের নেতাকর্মীরা একাদশ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পেছনে সাধারণ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দায়ী করলেও বিএনপির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশেষ করে যেকোনও বিষয়ে তারেক রহমানের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা আগ বাড়িয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে স্থায়ী কমিটির পাঁচ জনের একটি সিন্ডিকেট কাজ করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছিল তারেক রহমানের।

বিশেষ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এ বিষয়টির কোনও সুরাহা তিনি দিতে পারেননি। আর ঐক্যফ্রন্টের বড় শরিক হিসেবে বিএনপির কোনও সিদ্ধান্ত না পেয়ে ড. কামাল হোসেনও ছিলেন দায়সারা। প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি কয়েকবারই কূটনীতিকদের জবাব দিয়েছেন— পার্লামেন্টে ঠিক হবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। এছাড়া, হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ দুই জনকে মনোনয়ন দিয়ে নতুন করে সিনিয়র নেতাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেন তারেক রহমান। বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র মনে করে, এসব কারণে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা সহজ হয়েছে।

বিএনপির হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি জানায়, জেলে থাকা খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ইতিবাচক ছিলেন তারেক রহমানসহ তার চারপাশের লোকজন। এই ধারণা যে ভুল ছিল, তা দিনে-দিনে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে হাইকোর্টের দ্বিধাবিভক্ত রায়ের কারণে তারেক রহমান উৎসাহী হলেও আদতে তা স্যাবোটাজ হিসেবে কাজ করেছে। এ বিষয়টিও তারেক রহমানের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা হিসেবে দেখছেন একাধিক দায়িত্বশীল।

এছাড়া, জামায়াতের প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়টিকেও হাইকমান্ডের দুর্বলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে স্থায়ী কমিটির ছয় জন সদস্যের সঙ্গে কথা হলেও তারা উদ্ধৃত হতে অনিচ্ছুক। এই সদস্যরা মনে করেন, আগামী কয়েকমাস খুব নিবিড়ভাবে তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত ও আচরণের খেয়াল রাখবেন তারা। এরপরই নিজেদের ভাবনা ও মত তুলে ধরবেন তার কাছে। এর আগে তারেক রহমান কী চাইছেন, তাই মুখ্য তাদের কাছে।

বিএনপি রাজনীতির গভীর পর্যবেক্ষক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের ব্যাখ্যা, ‘সংগঠন দায়ী নয়। নির্বাচনের শেষের দিকে এসে অনেক সিদ্ধান্ত এসেছে, সেগুলো অপ্রয়োজনীয় ছিল। প্রতিপক্ষ কোন কোন প্রক্রিয়ায় জিততে চাচ্ছে, সেটা তো দেশি-বিদেশি সবার কাছে পরিষ্কার ছিল। তারা সরকারি লোকদের কাজে লাগাবে, গত ১০ বছরে এমনভাবে নিয়োগ দিয়েছে, তাদের ছাত্রগোষ্ঠী থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কী করা দরকার ছিল, এটা আগেই পরিষ্কার করা প্রয়োজন ছিল। জনগণের সামনে পুরো বিষয়টা উপস্থাপন করে অগ্রসর করার দরকার ছিল। এটাই হয়নি।’ খবর বাংলাট্রিবিউন