হলি আর্টিজান হোটেলের হামলার ঘটনায় গ্রেফতার রিপনের বাড়ি বগুড়ায়

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারী ২০১৯ ১০:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৫৬ বার।

 

গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে শনিবার মধ্যরাতে সন্দেহভাজন যে জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তিনি গুলশানের হলি আর্টিজান মামলার পলাতক আসামি মামুনুর রশিদ রিপন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। নব্য জেএমবি’র সুরা সস্য ৩০ বছর বয়সী রিপনের বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার শেখের মাড়িয়া গ্রামে।তার বাবার নাম নাছির উদ্দিন। সে বগুড়ায় সাইবার টেক নামে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এক সময় সেখানেই চাকরি করতো। খবর বিডিনিউজ২৪ডটকম।

এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, “রাত ১১টার দিকে একটি বাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে হালুয়াঘাট থেকে ঢাকার দিকে আসছিল।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে রেজাউল করিম ওরফে রেজা নব্য জেএমবির একজন সুরা সদস্য।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় রিপন অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।  

গ্রেপ্তারের সময় রিপনের কাছে দেড় লাখ টাকা পাওয়া গেছে বলেও মুফতি মাহমুদ খান জানান।

রোববার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ৩১ বছর বয়সী রিপনের বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রামের শেখের মাড়িয়ায়। বাবার নাম নাছির উদ্দিন।

বগুড়া, নওগাঁ ও ঢাকার মিরপুরের কয়েকটি মাদ্রসায় লেখাপড়া করার পর ২০০৯ সালে রিপন চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদ্রাসাতুল দারুল হাদিস থেকে কওমি মাদ্রসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি ‘দাওরায়ে হাদিস’ পান।

বগুড়ায় সাইবার টেক নামে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে অফিস অ্যাপ্লিকেশন কোর্স করার পর ওই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি শুরু করেন রিপন।ওই চাকরিতে থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালে তিনি জেএমবির একাংশের আমির ডা. নজরুলের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান বলে জানানো হয় র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে। 

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, “ডাক্তার নজরুল তখন তার সাংগঠনিক নাম দেন রিপন। সে আগে রশিদ নামেই পরিচিত ছিল। প্রাথমিকভাবে তাকে সংগঠনের জন্য চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।”

ছিনতাইয়ের মাধ্যমে রিপন সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন জানিয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, “এ পর্যন্ত  তিনটি ছিনতাইয়ের কথা তার (রিপন) কাছ থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে বিকাশের ৬ লাখ টাকা, এক সিগারেটের বিক্রেতার কাছ থেকে এক লাখ টাকা এবং গাইবান্ধার এক ঘটনায় এক লাখ টাকা ছিনতাই করে সে।”

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে পাঁচ তরুণের ওই হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করা হয়। নজিরবিহীন ওই হামলা দেশে জঙ্গিবাদের বিপদজনক বিস্তারের মাত্রা স্পষ্ট করে তোলে।

পরদিন কমান্ডো অভিযানে নিহত হন হামলাকারী পাঁচ তরুণ - রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাজ ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে তাদের মধ্যে জীবিত আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করা, বাংলাদেশকে একটি ‘জঙ্গি রাষ্ট্র’ বানানো।

 

আসামিদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে গতবছর ২৬ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুজিবুর রহমান।

মামলার আসামিদের মধ্যে নব্য জেএমবির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও হাদিসুর রহমান সাগরকে আগেই গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বাকি দুই আসামি শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার চলছিল। তাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে সম্পত্তি জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা এতদিন বলে আসছিলেন, খালেদ ও রিপন পালিয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে ধারণা করছেন তারা।

আর ভারতীয় গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার ২০১৭ সালের শুরুতে খবর দিয়েছিল, ‘আবু সুলেমান’ ও ‘বাংলার বাঘ টু’ ছদ্মনাম নিয়ে খালেদ ও রিপন পশ্চিমবঙ্গে জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন। 

তাদের মধ্যে রিপনকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করলেও খালেদের কোনো সন্ধান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও পায়নি।

২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী, অপরাধ প্রমাণিত হলে হলি আর্টিজান মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।