বগুড়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে মির্জা ফখরুল

পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে  বিএনপিকে শক্তিশালী করতে হবে

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারী ২০১৯ ১৩:৫২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৫ বার।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দলকে পুনর্গঠনের কথা জানিয়ে বলেছেন, এ লক্ষ্যে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানে তারেক রহমান কাজ শুরু করেছেন। বুধবার বগুড়ায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘গ্লোবালাইজেশনের ফলে অতীতের যে ধারণাগুলো ছিল সেগুলো বদলে যাচ্ছে। গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা বদলাচ্ছে, পরিবার সম্পর্কে ধারণা বদলাচ্ছে, সমাজ সম্পর্কে ধারণা বদলাচ্ছে, রাষ্ট্র সম্পর্কেও ধারণা বদলাচ্ছে। এই পুরো জিনিসগুলো সঙ্গে নিয়েই আমাদেরকে সামনে এগুতে হবে। সংগঠনকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে করে আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে আবারও জয়ী করতে পারি- সেই লক্ষ্যেই আমাদের এগুতে হবে।’
নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় ফেরার পথে দুপুরে স্থানীয় একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিজয়ী মির্জা ফখরুল ইসলাম পরে ওই হোটেলের ৮ম তলার একটি হলরুমে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিনি নিজে কোন কথা বলেননি। এমনকি এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নও তিনি ‘পরে দেখা যাবে’ বলে এড়িয়ে গেছেন। এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের পূর্বে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁনের সঙ্গে মহাসচিবের সফর কর্মসূচী নিয়ে বাগবি-ায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলামের জ্যাকেট ধরে কাছে টেনে নিয়ে তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তিনি তাকে ধমকও দেন। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর কোন নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে একটা নিষ্ঠুর তামাশা হয়েছে। একটি দল নিজেকে ক্ষমতায় ধরে রাখার জন্য সমস্ত মূল্যবোধ ও অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ 
বিএনপির সামনে বিকল্প কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পরবর্তী সবচেয়ে বড় কাজ যেটা সেটা হচ্ছে আবার জনগণের কাছে যাওয়া। আবার ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে সব জায়গায় চলে যাওয়া। তাদের সঙ্গে থাকা, তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িত হওয়া। বিশেষ করে যারা মামলার মধ্যে আবদ্ধ আছেন তাদের পাশে দাঁড়ানো-এই কাজগুলো আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ।’
‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই’-এ দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে কারারুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা দিয়েছন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নেত্রী আমাকে যে নির্দেশ পাঠিয়েছেন তা হচ্ছে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। শুধু ঐক্যফ্রন্ট কিংবা ২০ দলীয় জোট নয়, বাইরে যারা আছেন তাদেরকেও একখানে করতে হবে- একটি মাত্র দাবিতে যে আমরা গণতন্ত্রকে ফিরে চাই। যে গণতন্ত্র ৩০ ডিসেম্বর হরণ করা হয়েছে সেই গণতন্ত্রকে আমরা ফিরে চাই। আমরা আমাদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কথা বলার অধিকারকে ফিরে পেতে চাই। এটাই আমাদের মূল কাজ।’
দলের পুনর্গঠনে নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করছেন কথা বলছেন এবং সবার মতামত নিচ্ছেন। তিনি (তারেক রহমান) সংগঠনের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, নির্বাচনে যারা প্রার্থী ছিলেন তারা, উপদেষ্টা কমিটি, সম্পাদক ম-লীর সদস্যসহ সবার সঙ্গে কথা বলার পরই আমরা হয়তো একটি সিদ্ধান্তে আসবো। যেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা ভবিষ্যতে কাজ করবো।’
কারারুদ্ধ চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদেরকে সেই লড়াই ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে হবে। শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে শক্তিশালী হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমরা কখনোই আর ঘরে ফিরে যাওয়া বা বিশ্রাম নেওয়ার কথা চিন্তাও করবো না।’
অনুষ্ঠানে বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। এ সময় মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপার্সনের দুই উপদেষ্টা বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান ও সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।