কৃষি-অকৃষি জমি থেকে শুরু করে নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থসহ সব আসবাবের বিবরণ দিতে হবে

কর্মকর্তারা বাদ: ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারিদেরই শুধু সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯ ০৭:০৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৭ বার।

 

কথা ছিল ভূমি মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারি সবার সম্পদের হিসাব জমা নেওয়া হবে এবং তা ২৮ ফেব্রুুয়ারির মধ্যেই দাখিল করতে হবে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে শুধু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে গত ১৭ জানুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিক সমকালের খবরে বলা হয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ক্যাডারভুক্ত সব কর্মকর্তা অর্থাৎ সহকারী সচিব থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত সবাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া-না নেওয়ার বিষয়টি ওই মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। তাই ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের সম্পদের হিসাব নিতে পারছে না। 

এমন সিদ্ধান্তের কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কর্মকর্তা নয়- তার মেইন টার্গেট নিচের দিকে। কারণ সাধারণ মানুষ সেবা নিতে এসে নিচের দিকেই সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়। উপরের দিকে তেমন সমস্যা নেই। তাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে। যাদের মধ্যে সারাদেশের ভূমি অফিসের তহসিলদারসহ অনেকেই অন্তর্ভুক্ত। তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

তবে কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে শুধু কর্মচারিদের সম্পদের হিসাব গ্রহণের সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক এবং অগ্রহণযোগ্য হিসেবে দাবি করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, একই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য এক ধরনের নীতি আর কর্মচারীদের জন্য আরেক ধরনের নীতি- এটি বৈষম্যমূলক, হতাশাব্যঞ্জক, অগ্রহণযোগ্য। সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এটি হতে পারে না। ’ তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রীর বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট। তিনি যদি বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখেন এবং তার অবস্থানে অনড় থাকেন, তাহলে অবশ্যই কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া সম্ভব হবে। বৈষম্য করে দেখার কোনো সুযোগ নেই, দেখা উচিত হবে না। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য একই মাপকাঠির অবস্থানে থেকে মন্ত্রীকে তার ঘোষণা কার্যকর করার পদক্ষেপ নিতে হবে। 

গত ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে নতুন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়-সংশ্নিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে শুধু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব নেওয়ার জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এতে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড, ল্যান্ড কমিশন, হিসাব নিয়ন্ত্রক (রাজস্ব), ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান, সব বিভাগীয় কমিশনার, সব জেলা প্রশাসক ও সারাদেশের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারদের কাছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাবের ফরমসহ চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ হিসাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সম্পদের হিসাব নেওয়ার ফরমে স্থাবর সম্পদ হিসেবে কৃষি-অকৃষি জমি, ইমারত, বসতবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ করা হয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে অলঙ্কারাদি, স্টকস, শেয়ার, বীমা, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, মোটর ভেহিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র, কম্পিউটার, টেলিভিশন, এয়ারকুলার, রেফ্রিজারেটর, ওভেন ইত্যাদি। 

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী, কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে। সংশ্নিষ্ট দপ্তর ও অধিদপ্তরের প্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ওই বিধিমালার বিধি-১৩-এর উপবিধি-১ অনুযায়ী কর্মচারীরা চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় তাদের সম্পদের তথ্য জানাবে। উপবিধি-২ অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর তারা তাদের সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব পেশ করবেন। এই উপবিধি-২ অনুযায়ী তাদের কাছে সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। 

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানাচ্ছে, কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ এ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ক্যাডারভুক্ত সব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সহকারী সচিব থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত সবাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়া-না নেওয়ার বিষয়টি ওই মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। তাই ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের সম্পদের হিসাব নিতে পারছে না। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা সাংবাদিকদের জানান, বড় বড় দুর্নীতি ওপরের দিকেই হয়ে থাকে। নিচের দিকে দুর্নীতি হলেও তা উচ্চ পর্যায়ের তুলনায় বেশ নগণ্য। প্রায় দুই বছর আগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব প্রভাব খাটিয়ে আইন লঙ্ঘন করে গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী একটি সরকারি পুকুর একটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেন। এর বিনিময় মূল্য কোথাও লেখা না থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, পুকুর গ্রাস করা প্রতিষ্ঠানটি ১০-১৫ কোটি টাকায় এর রফা করেছিল। 


ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, কর্মকর্তাদের হিসাব নেওয়া হবে না- এ কথা তিনি বলছেন না। জনপ্রশাসন থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে যেসব কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লেখা হবে। তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হওয়ায় কাজটা সেখান থেকেই করা হবে। পরে এই কর্মকর্তাদের সম্পদবিবরণী ভূমি মন্ত্রণালয়ে আনা হবে।