পুণ্ড্রকথার তাৎক্ষণিক জরিপ

বগুড়ায় যানজট নিরসনে পুলিশের উদ্যোগঃ পক্ষে ৩৫ এবং বিপক্ষে ৫৪ শতাংশ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারী ২০২১ ১৬:০৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৬৭ বার।

বগুড়া শহরকে যানজটমুক্ত করতে জিরো পয়েন্ট সাতমাথাসহ সংলগ্ন এলাকায় ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলের ওপর পুলিশের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে ৫৪ শতাংশ মানুষ সমর্থন করেননি। শহরে বসবাসকারি নাগরিকদের ২৭ শতাংশ মনে করেন জেলা পুলিশের  নেওয়া ওই সিদ্ধান্তে তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। শহরকে যানজট মুক্ত রাখার জন্য তারা বিকল্প একাধিক প্রস্তাবও দিয়েছেন। তবে ৩৫ শতাংশ মানুষ পুলিশের ওই সিদ্ধান্তকে যথার্থ বলে মনে করেন।আর ১১জন সিদ্ধান্তটিকে ‘ভাল এবং মন্দ’ বলে উল্লেখ করেছেন। অনলাইন দৈনিক পুণ্ড্রকথার তাৎক্ষণিক এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 
ব্যাটারি চালিত যান চলাচলের সীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে- শহরের এমন ৭টি স্পটে সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে পরবর্তী এক ঘন্টায় অটোরিকশা থেকে নেমে পড়া যাত্রীদের ওপর তাৎক্ষণিক ওই জরিপ চালানো হয়। পুণ্ড্রকথা’র হেড অব নিউজ অরূপ রতন শীলের নেতৃত্ব ৩জন রিপোর্টার ওই জরিপে অংশ নেন। মোট ১০০জন যাত্রীর ওপর জরিপটি চালানো হয়। জরিপে অংশ নেওয়া যাত্রীদের ২১ জন নারী এবং ৭৯ পুরুষ ছিলেন। 

 

পুণ্ড্রকথার পক্ষ থেকে তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল- (১) যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের নেওয়া উদ্যোগকে আপনি সমর্থন করেন কি’না? (২) সমর্থন করলে কেন? (৩) সমর্থন না করলে আপনার বিকল্প প্রস্তাব কি এবং (৪) এমন সিদ্ধান্তের কারণে ভোগান্তি বেড়েছে বলে মনে করেন কি’না? জরিপে ৮৯জন সরাসরি উত্তর দিয়েছেন। ওই জরিপে অংশ নেওয়া ১০০জনের নাম, ঠিকানা এবং পেশা পুণ্ড্রকথার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
 

বগুড়া শহরের যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই সমস্যা সমাধানে জেলা পুলিশ গত ১ জানুয়ারি থেকে শহরে ইজিবাইক, অটোরিকশা, মেট্রো রিকশা ও সকল প্রকার ব্যাটারীচালিত যান চলাচলের ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। পৌরসভার অননুমোদিত এসব যানবাহনগুলো যাতে জিরো পয়েন্ট সাতমাথাসহ সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তাদের চলাচলের সীমা উত্তরে বড়গোলা, দক্ষিণে ইয়াকুবিয়া স্কুল ও দক্ষিণ-পশ্চিমে টিটু মিলনায়তন মোড়, পশ্চিমে বিআরটিসি মার্কেটের প্রবেশ মুখ, উত্তর-পশ্চিমে সেলিম হোটেলের সামনে, পূর্বে রানার প্লাজা ও চেলোপাড়া ব্রীজের নিচ পর্যন্ত বেধে দেওয়া হয়। 
 

ওই ৭টি পয়েন্টে পুলিশের পক্ষ থেকে রীতিমত চেক পোস্ট বসিয়ে শুধু পা চালিত সনাতনী রিকশাগুলোকে চলাচলের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে জরুরী সেবা এবং রোগী পরিবহনে নিয়োজিত ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলোকে চলাচলে কোন বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু ব্যাটারীচালিত রিকশা চলাচলের ওপর নির্দিষ্ট সীমা বেধে দেওয়ায় ওই ৭টি স্পটে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাটারী চালিত রিকশা থেকে নেমে পা চালিত রিকশা না পেয়ে কয়েক শ’ গজ হাঁটার কারণে অনেকে জেলা পুলিশের নেওয়া ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সমর্থনও করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য পুণ্ড্রকথার পক্ষ থেকে ওইসব স্পটে তাৎক্ষণিক জরিপ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।


জরিপে অংশ নেওয়া ১০০জনের মধ্যে ৫৪জন জেলা পুলিশের ওই উদ্যোগকে সমর্থন করেন নি। এমন সিদ্ধান্তের কারণে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ২৭জন নারী-পুরুষ। তাদের অনেকে বলেছেন- পা চালিত সনাতনী রিকশার সংখ্যা এমনিতেই কম। তাই বিপুল সংখ্যক মানুষের চলাচলে ভোগান্তি বেড়েছে। শহরের ফতেহ্ আলী বাজারের সামনে ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নারুলী এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আব্দুর রউফ তার ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, ‘এতগুলো বাজার নিয়ে এখন আমাকে চেলোপাড়া ব্রীজের নিচ পর্যন্ত হেঁটে যেতে হবে। এটা কি আমার পক্ষে সম্ভব?’ গাবতলীর নাড়ুয়ামালা থেকে ফিজিওথেরাপি দিতে আসা ষাটোর্ধ্ব মেহেরজান জানান, তার রিকশা দত্তবাড়ি পার হওয়ার পরই ‘পুলিশ আর যেতে দিবে না’ বলে রিকশা চালক তাকে নামিয়ে দেয়।


শহরের সুত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা আসাদুল হক  সনাতনী রিকশাকে ব্যাটারি চালিত রিকশায় রূপান্তরের বিরোধিতা করে বিদেশ থেকে আমদানি করা রেডিমেড নিচু রিকশাগুলোকে অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। রাজশাহী এবং রংপুর শহরে ওই ধরনের রিকশা অবাধে চলাচল করছে- এমন উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সনাতনী রিকশাগুলোতে মোটর লাগানোর কারণে সেগুলোর চালকরা গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে। আমার জানা মতে এ পর্যন্ত এসব রিকশায় চড়ে ২জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তাই এসব রিকশা উঠিয়ে নিয়ে তার স্থলে আমদানী করা রেডিমেড অটোরিকশাগুলোকে লাইসেন্সের আওতায় আনা প্রয়োজন। শহরের আয়তন অনুযায়ী লাইসেন্স সংখ্যা এবং কিলোমিটার প্রতি ভাড়াও নির্ধারণ করতে হবে। তাহলে যানজট যেমন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে তেমনি মানুষের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত হবে।’


তবে পুলিশের এই উদ্যোগকে যারা সমর্থন জানিয়েছেন তাদের একজন উপ-শহর এলাকার গৃহবধু শারমিন আক্তার বলেন, ‘এটা অনেক ভাল উদ্যোগ। এতে দূর্ঘটনা কমবে।’ খান্দার এলাকার কলেজ ছাত্রী বর্ষার মতে আপতত কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এটা ধরে রাখতে পারলে মানুষ অভ্যস্থ হয়ে পড়বে এবং যানজটও কমে আসবে। তিনি অবশ্য ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলোকে উঠিয়ে দেওয়ারও প্রস্তাব করেছেন।


বগুড়ায় পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানিয়েছেন, বগুড়া শহরকে সুন্দর রাখার জন্য তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোরভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’