দলমত নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯ ১৪:০৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৩ বার।

দলমত নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের সমর্থন এবং সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশেবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আপনারা আমার উপর আস্থা রেখে যে রায় দিয়েছেন, কথা দিচ্ছি আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব সে আস্থার প্রতিদান দিতে। এজন্য দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, দশ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। মানুষের জীবনমান এখন অনেক উন্নত। এখন মানুষ সুন্দর করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। দেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই। তাই সামনে অনেক কাজ আমাদের। আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। আপনাদের সঙ্গে নিয়ে সেই বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেেশ দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচার করে।

দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে বিপুলভাবে বিজয়ী করায় আমি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। যারা নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের বিজয়ী করেছেন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা আমাদের ভোট দেননি, আমি তাদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল দল ও জোট এবং প্রার্থীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সহযোগিতায় আমরা এ বিশাল বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আমি দেশবাসী, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ফজিলাতুন নেছা মুজিব, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতীয় চার-নেতা, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনে শহীদ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায নিহত এবং ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন সময় নিহত নেতাকর্মীদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি জরিপগুলোও এ রকমই ফলাফলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। লন্ডন-ভিত্তিক ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট এবং রিসার্স এন্ড ডেভলপমেন্ট সেন্টারের জরিপের ফল আপনারা লক্ষ্য করেছেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সাধারণ মানুষ তার সুফল পেয়েছেন। সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা, কৃষি, চাকরি, ব্যবসা, নারীর ক্ষমতায়ন প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরেন তিনি। 

প্রতিপক্ষ জোটের পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক আসনে ৩-৪ জন বা তারও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন, মনোনয়ন বাণিজ্য, দুর্বল প্রার্থী, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদগার, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাতের দেশব্যাপী অগ্নি-সন্ত্রাসের কারণে তাদের পরাজয় হয়েছে। বিএনপির ধানের শীষ মার্কায় যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। তরুণেরা আর যাই হোক স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তির পক্ষ নিতে পারে না। এ রকম আরও বহু উদাহরণ দেওয়া সম্ভব, যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে যে সাধারণ ভোটারগণ বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং নৌকার অনুকূলে এবার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা টানা তৃতীয়বার এবং ১৯৯৬ সাল থেকে চতুর্থবারের মত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়েছেন। আপনাদের এবারের এই নিরঙ্কুশ সমর্থন আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের এই রায়কে দেশবাসীর সেবা এবং জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার ও সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ বলে মনে করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যে প্রতিশ্রুতি দেই, তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছিলাম তার অধিকাংশই ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি।