পুলিশ সপ্তাহ ২০১৯

বিপিএম-পিপিএম পাচ্ছেন সাড়ে তিন শ’র বেশি পুলিশ কর্মকর্তা!

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারী ২০১৯ ০৫:১৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৯৮ বার।

সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য এবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পদক পাচ্ছেন পুলিশের সাড়ে তিন শ’র বেশি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য। রেকর্ড সংখ্যক এই পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে এবার বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকাও। শুধু এ কারণেই একযোগে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) পেতে পারেন এই পুরস্কার যা অতীতে কখনোই ঘটেনি। এ তালিকায় থাকছেন মেট্রোপলিটন এলাকার ক্রাইম জোনের ডিসি, রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।


বিপিএম সাহসিকতা ও সেবা এবং পিপিএম সাহসিকতা ও সেবা- এই চারটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বছরের পুলিশ সপ্তাহের জন্য ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতর থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা চূড়ান্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগে অনুষ্ঠিতব্য পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের হাতে এসব পদক তুলে দেবেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত বছর সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৮২ জন জনকে বিপিএম পিপিএম পদক প্রদান করা হয়। চলতি বছর এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণ ছাড়াও এবার সুষ্ঠুভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করায় ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, মেট্রোপলিটন এলাকার ক্রাইম জোনের ডিসি, রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই পদক পাচ্ছেন। ২০১৭ সালে পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ছিল ১৩২ জন।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেবেন। পদক কমিটি তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ করছে। চলতি সপ্তাহে এ সংক্রান্ত গেজেট হতে পারে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর মোট ৪০ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক- বিপিএম (সাহসিকতা) দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে  দুজন পাবেন মরণোত্তর। এছাড়া বিপিএম সেবা পদক পাবেন ১০৪ জন। এবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক- পিপিএম (সাহসিকতা) পেতে যাচ্ছেন ৬২ জন এবং পিপিএম (সেবা) পদক পেতে পারেন ১৪৪ জন।


পুলিশ সদর দফতরের সুপারিশে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, অনেকে আহতও হয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। দেশের স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা ও উন্নয়ন-বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ধরে রাখায় বাংলাদেশ পুলিশ অনন্য সাধারণ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। সাহসিকতা, বীরত্ব প্রদর্শন ও সেবার অনন্য নজির স্থাপন করায় প্রত্যেক পুলিশ সদস্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিদার। পদকের জন্য সহস্রাধিক আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি মোট ৩৫০জন পুলিশ সদস্যকে পদকের জন্য মনোনয়ন দেয়।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এবার পদকের সংখ্যা অন্যান্য যে কোনও সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ বেশি। পুলিশের ইউনিট ও সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে করার জন্য ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকেই পদক দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকার কমিশনারসহ ক্রাইম জোনের দায়িত্বশীল উপ-কমিশনার এবং রেঞ্জ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও পদক পাচ্ছেন। এবার র‌্যাবের প্রত্যেক ব্যাটেলিয়ন কমান্ডারসহ মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও পদক পেতে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গেজেট প্রকাশের আগে এই তালিকা থেকে কারও নাম বাদ না গেলেও নতুন করে দুই-একজনের নাম ঢুকতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপিএম (সাহসিকতা) পদকের তালিকায় এবার মরণোত্তর পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন দু’জন পুলিশ সদস্য। তারা হলেন প্রয়াত পুলিশ পরিদর্শক মো. জালাল উদ্দিন ও প্রয়াত কনস্টেবল মো. শামীম মিয়া। গত বছরের ১৯ মার্চ দিবাগত রাতে মিরপুরের পীরেরবাগের একটি বাড়িতে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান ডিএমপির তৎকালীন গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগ ও পল্লবী জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. জালাল উদ্দিন। পরে, একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।


বিপিএম (সাহসিকতা)-র তালিকায় থাকা অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের মধ্যে র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ, ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, র‌্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম, সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ, সিটিটিসির উপ-কমিশনার এএইচএম আব্দুর রাকিব, প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার, সদ্য এসপি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত সিটিটিসির অতিরক্ত উপ-কমিশনার আসাদুজ্জামান, এডিসি জাহাঙ্গীর আলম, সোয়াট প্রধান এসি জাহাঙ্গীর হাছান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি শাহাদত হোসেন সুমা, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন প্রমুখ।
বিপিএম (সেবা) পদক পেতে যাচ্ছেন পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজি মইনুর চৌধুরী, এসবির অতিরিক্ত আইজি মীর শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম, ইকবাল বাহার, চট্টগ্রামের কমিশনার মাহবুবুর রহমান, বরিশালের পুলিশ কমিশনার মোশারফ হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ময়মনসিংহের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার মো. তবারক উল্লাহ প্রমুখ।