ফেসবুকের কল্যাণে ১৭ বছর পর বাবা-মাকে খুঁজে পেলেন তানিয়া

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারী ২০২১ ০৫:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৪ বার।

বাবার সঙ্গে ঢাকা শহর দেখতে এসে হারিয়ে গিয়েছিল আট বছরের তানিয়া আক্তার। পরে সে একটি পরিবারে মেয়ে হিসেবে বড় হয়। পরিবারটি তাঁকে বিয়েও দেয়। এখন তিনি দুই সন্তানের জননী। স্বামী ও তাঁর এক বন্ধুর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার মাধ্যমে ১৭ বছর পর গত শনিবার রাতে সেই তানিয়া খুঁজে পেয়েছেন তাঁর মা-বাবাকে! গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে স্বামী-সন্তান নিয়ে শত মাইল দূরে মা-বাবার বাড়িতে যাচ্ছিলেন তানিয়া। 

তানিয়া গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার পশ্চিমপাড়ার মো. সুন্দর আলীর মেয়ে। তাঁর স্বামী আখাউড়া পৌর এলাকার শান্তিনগরের আনোয়ার হোসেন।

তানিয়া ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার একটি বাস কাউন্টারে কর্মরত ছিলেন সুন্দর আলী। ২০০৪ সালে মেয়ে তানিয়ার আবদার মেটাতে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে ওঠেন আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায়। সবার অজান্তে একদিন বাসা থেকে বের হয়ে যায় তানিয়া। পরে বাসা চিনতে না পেরে সে ছুটে যায় ফুফাতো বোনের স্কুলে। কিন্তু দারোয়ান তাকে স্কুলে ঢুকতে দেননি। রাস্তাঘাট না চেনায় একপর্যায়ে সে একটি বাসে করে সংসদ ভবনের কাছে যায়। সেখানে একটি দোকানে টেলিভিশন দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। তখন বাসায় ফিরতে সে অনেক কান্নাকাটি করে। কিন্তু ঠিকানা বলতে না পারায় এক হিন্দু ব্যক্তি তাকে তাঁর বাসায় নিয়ে যান। পরের দিন তানিয়াকে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন তিনি।

তানিয়া বলেন, ‘একপর্যায়ে কলাবাগান এলাকায় আরজুদা খাতুন মিলন ও তাঁর ছেলে রিপনের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তাঁরা বিষয়টি জেনে আমাকে তাঁদের বাসায় নিয়ে যান। এরপর ওই বাড়িতে আমি বড় হই। রিপনকে আমি বাবা বলে ডাকি। তাঁরা খুব আদর-যত্ন করতেন। ওই পরিবার থেকেই আমার বিয়ে হয়।’ তানিয়া জানান, রিপনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার রায়তলা গ্রামে।

তানিয়ার স্বামী আনোয়ার হোসেন বলেন, রিপন তাঁর পূর্বপরিচিত। সব কিছু জেনেশুনেই আনোয়ার তানিয়াকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুই ছেলে-মেয়ে। তানিয়া প্রায়ই মা-বাবাকে হারানোর কথা বলতেন। এ অবস্থায় তানিয়ার ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন আনোয়ার ও এক বন্ধু। সেই সূত্র ধরেই শনিবার রাতে আখাউড়ায় ছুটে আসেন তানিয়ার মা-বাবা।

১৭ বছর পর তানিয়ার সঙ্গে মা-বাবার দেখা হলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। জড়ো হয় এলাকাবাসী। দিনভর স্মৃতি নিয়ে কথা বলেন পরিবারের লোকজন।

তানিয়ার ছোট বোন সোনিয়া খানম বলেন, ‘বোনের ছোটবেলার অনেক স্মৃতি মনে আছে। বোনকে হারানোর পর সব সময় মন খারাপ থাকত। ভাবতাম, বোনকে বুঝি কখনো পাব না। তবে আম্মা প্রায়ই বলতেন, এই দেশটা ছোট; একদিন না একদিন মেয়েকে ঠিকই ফিরে পাব। বোনকে পেয়ে আমরা খুশি।’

সুন্দর আলী গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘প্রতিবেশী রুমা ফেসবুকে তানিয়ার বিষয় নিয়ে লেখালেখির কথা আমাদের জানায়। এরই সূত্র ধরে ঠিকানা বের করে মেয়ের বাড়িতে আসি। এখন মেয়ে ও তাঁর স্বামী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি। এভাবে মেয়েকে খুঁজে পাব কখনো ভাবিনি।’ তিনি এ জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন।