বগুড়ার ২১৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারী ২০২১ ১৩:৩১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৭৭ বার।

দশ বছর হতে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে বগুড়ার ভান্ডারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দুরে বগুড়া সদর উপজেলার নামুজা ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টিতে ২০২০ সালে শিক্ষার্থী ছিল ১৭০জন। শিশু শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ভান্ডারীপাড়া বিদ্যালয়ে এ বছর রয়েছে ১৮০জন শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক ছাড়াই ওই বিদ্যালয়টিতেও পাঠদানসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভান্ডারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত প্রায় এক দশকের বেশি সময় হতে প্রধান শিক্ষক নেই নন্দীগ্রামের বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ভান্ডারীপাড়া ও বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত বগুড়ার ১২টি উপজেলার ২১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে বলে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে। 

ওই দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলার ১ হাজার ৬০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ১ হাজার ৫৯১টি। এরমধ্য ২১৬টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বাকি ১০টি স্কুলে পদ এখনও সৃষ্টি হয়নি। সহকারি শিক্ষকের ১০ হাজার পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৬৯টি পদ। 

জানা গেছে, বগুড়া সদরের ৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এরমধ্য নামুজা ইউনিয়নের ভান্ডারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১১ সালে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। এরপর থেকে ওই বিদ্যালয়ের শূন্যপদ আর পূরণ হয়নি। বিদ্যালয়টি শহর থেকে একটু দুরে হওয়ায় ওই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক যেতেও চান না। একইভাবে ওই ইউনিয়নের মথুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাত বছর হতে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে। এছাড়াও একই ইউনিয়নের বড় টেংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হুকমাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের ৪টি বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে। এরমধ্য মধুমাঝিড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৮ বছর আগে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়। এরপর থেকেই ওই বিদ্যালয়ের পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে। 

এছাড়াও ওই ইউনিয়নের কোয়ালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাত-শিমুলিয়া বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রোকনগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বগুড়া শহরের চক সূত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে এই বছরের ৩ জানুয়ারি।

জেলার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ধুনট উপজেলায়। ওই উপজেলায় ২০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টি বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষক নেই। এরমধ্য অধিকাংশ বিদ্যালয়ে প্রায় ৭-৮ বা তারও বেশি সময় থেকে প্রধান শিক্ষক নেই। এরপরেই বেশি সংখ্যক শূন্যপদ রয়েছে নন্দীগ্রাম উপজেলায়। ওই উপজেলায় ১৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেই। এরমধ্য দীর্ঘ বছর থেকে বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। 

এছাড়া গুলিয়া কৃষ্ণপুর, হাটগাড়ি, নাগরকান্দি ও দমদমা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়েও প্রায় ৭-৮ বছর থেকে প্রধান শিক্ষক নেই। শেরপুর উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ওই উপজেলার তেঁতুলিয়া, হাতড়া ও শিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৮ বছর থেকে প্রধান শিক্ষক নেই। শিবগঞ্জ উপজেলার ১৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আদমদীঘি উপজেলারও শূন্য রয়েছে ১৯টি। সারিয়াকান্দী উপজেলার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ১৮টি বিদ্যালয়ের। কাহালু উপজেলারও ১৮টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সোনাতলা উপজেলায় ১৩টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শাজাহানপুর উপজেলায় শূন্য পদ রয়েছে ১২টি। গাবতলীতে ৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে এছাড়া দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৮টি বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ছাড়া চলছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন থেকে যে বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, সাধারণত ওই বিদ্যালয়গুলো একটু দুরে। জেলা বা উপজেলা শহরগুলো থেকে ওই বিদ্যালয়গুলোর দুরত্ব বেশি বা প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় কোন শিক্ষক সহজে ওই বিদ্যালয়গুলোতে যেতে চান না। বদলির সময় তারা শহরের ভিতর বা বাড়ি নিকটবর্তী এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে স্থানান্তরিত হতে চান। এ কারণে প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলো দীর্ঘদিন থেকে পদ শূন্য রয়েছে। 

নন্দীগ্রাম উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল কাইয়ুম জানান, ওই উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে দীর্ঘসময় থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণের পর থেকে প্রধান শিক্ষক শুন্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক শূন্য থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে একদিকে যেমন বিঘ্ন ঘটছে অপরদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমও বেশ ব্যাহত হচ্ছে। 

বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার তাহমিনা খাতুন জানান, দুইভাবে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ হয়। এরমধ্য ৩৫ ভাগ হয় সরাসরি নিয়োগে  ও ৬৫ ভাগ পদোন্নতিতে। দীর্ঘদিন থেকে সরাসরি নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। এই কারণে শূন্যতার সৃষ্টি  হয়েছে। তবে পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্য পদগুলো পুরণ প্রক্রিয়া কার্যক্রম চলছে।