রোজগার কমে যাওয়ায় চালকদের মাথায় হাত!

বগুড়ার সাতমাথায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ

অরূপ রতন শীল
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারী ২০১৯ ১৫:৩৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৯৬ বার।

বগুড়ার প্রাণ কেন্দ্র সাতমাথায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা পুলিশ। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা  পর্যন্ত সাতমাথা এলাকায় ওই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চালকেরা। সেই সাথে কর্মব্যস্ত যাত্রীরাও সমানভাবে দুর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন।

এর আগে কয়েক দফায়  ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষেধাজ্ঞাসহ কঠোর অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের সদস্যেরা। কিছুদিন পর থেকে প্রশাসনের চোখের আড়ালে সাতমাথা এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এখন আবার সজাগ হয়েছে জেলা পুলিশ। এবারের কঠোর অভিযানে অনেক চালককেই যানবাহনের  ব্যাপক ক্ষতিসহ  জরিমানাও গুনতে হয়েছে।

অনেকেই এবারের অভিযান ও নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার কঠোর সমালোচনাসহ নিন্দা জানিয়েছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা। পুণ্ড্রকথা ’র সংবাদকর্মীরা যাত্রী ও চালকদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। 

নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে  লিমন আকতার নামে এক যাত্রী জানান, সব সময় প্যাডেল চালিত রিকশা পাওয়া যায় না। আবার এসব রিকশায় চলাচলে সময়ও অনেক লাগে। তাই ব্যাটারিচালিত রিকশা আবার চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হোক।

 

বেগম নিঝুম নামের কে মধ্যবয়স্ক যাত্রী বলেন, 'হাতে ভারী ব্যাগ নিয়ে ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড যাব। কিন্তু অটোরিকশা যেতে না দেয়ায় থানা মোড়ে বাধ্য হয়ে নামতে হয়েছে। এই ব্যাগ নিয়ে এখন কিভাবে সাতমাথা পর্যন্ত হেটে যাব? আবার প্যাডেলচালিত রিকশা কম দুরত্বেও বেশী ভাড়া চেয়ে বসে। আমরা এই অবস্থায় চরম বিপাকে পরেছি।'

 

আবার অনেক যাত্রী ওই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থনও জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে শহরের শিববাট্টি এলাকার তুরাদ হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক মোটর গাড়ি মনে করে পথে ছুটতে থাকে। কে কার আগে যাবে এই পাল্লায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে। তাই এটা বন্ধ হওয়ায় আমরা খুশী।'

 

উপশহরের বাসিন্দা রোখসানা খাতুন জানান, আগে সাতমাথায় যেতে জ্যামে পড়তে হতো। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ হওয়ায় এখন আর সেই ভয় নেই। আমরা এখন জ্যাম কম থাকায় অনায়াসে সাতমাথায় যেতে পারছি।

 

সাতমাথায় চলাচলে  নিষেধাজ্ঞা জারি  নিয়ে ব্যাটারি রিকশা চালক বাবু বলেন, 'ভাড়ায় রিকশা চালাই। মালিককে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে দিতে হয়। যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকম দিন চলে যায়। কিন্তু এখন শহরে রিকশা চালাতে না পেরে দুর্ভোগে আছি। কারণ শহরের মধ্যে থেকে বেশী ভাড়া পাওয়া যায়।'

 

চালক জাহিদুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার হঠাত করে সাত মাথায় রিকশা নিয়ে ঢুকলে ট্রাফিক পুলিশ লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ির মিটার ভেঙ্গে দেয়। সেই সাথে টায়ারও ছিদ্র করে দেয়। এগুলো শুধু গরীব মানুষের পেটে লাথি মারা ছাড়া আর কিছুই না।


 
রিকশা চালক বাচ্চু মিয়া জানান, ২৫ হাজার টাকা দিয়ে পুরাতন ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনেছেন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে। যা আয় হয় তা দিয়ে সন্তানদের লেখা পড়া, সংসার চালানো আর কিস্তির ঋণ শোধ করি। কিন্তু এখন শহরে ঢুকতে না পারায় আয় রোজগার কমে গেছে। 

 

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বগুড়া সদর ট্রাফিকের  টিআই খলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পুণ্ড্রকথা কে জানান, গতি নিয়ন্ত্রণ নেই এমন রিকশা ও অবৈধ রিকশা চলাচল বন্ধে বেশ কয়েকদিন ধরে শহরে মাইকিং করা হয়েছে। মূলত শহরে যানযট নিরসনে ব্যাটারিচালিত রিকশা সাতমাথা এবং নবাব বাড়ি রোডের রানার প্লাজার সামনে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।