ব্যাথায় ফিজিওথেরাপিই দিতে পারে স্থায়ী সমাধান

প্রীতিকনা সরকারঃ
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০৫:০০ ।
ডাক্তারের খোঁজে
পঠিত হয়েছে ২০৭১ বার।

ফিজিওথেরাপি কি তা সবারই জানা উচিত। ফিজিও অর্থ ফিজিক্যাল অর্থাৎ শারীরিক এবং থেরাপি অর্থ ট্রিটমেন্ট বা চিকিৎসা। সহজ কথায় বলা যায় এটা এক ধরনের শারীরিক চিকিৎসা। আমাদের প্রায় সব বয়সের মানুষই আজকাল হাড়-জোড়া ও মাংসপেশীর ব্যাথায় ভুগছেন। দেখা যায় প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষই ব্যাথা নিরাময়ের জন্য  পেইনকিলার গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু এভাবে দীর্ঘদিন পেইনকিলার গ্রহণের ফলে কিডনিসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, যা পরবর্তীতে ভয়ানক রোগ সমূহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট লক্ষ্য করলে দেখা যায় ব্যাথানাশক ও স্টেরয়েড নিতে নিতে যখন কেউ যখন প্রায় পঙ্গু হয়ে যান তখন তারা ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যান।
বহির্বিশ্বে বিশেষত উন্নত দেশগুলেতে ব্যাথাজনিত সমস্যার জন্য লোকজন পেইনকিলার জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলেন। বরং ব্যাথা সংক্রান্ত সমস্যায় তারা প্রথমেই একজন ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যান। বাংলাদেশেও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। অনেকেই এখন ব্যাথা নিরাময়ের জন্য ব্যাথানাশক ওষুধের পরিবর্তে অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যাচ্ছেন এবং তাদের পরামর্শ নিয়ে ব্যাথামুক্ত সুস্থ জীবন যাপন করছেন।
ঘটনা-১:
সকালে ঘুম ভাঙার পর ওয়াশরুমের আয়নায় চোখ যেতেই রীতিমত চমকে উঠলেন। একি! মুখটা যে একপাশে বেঁকে গেছে! ভয় পেলেও আপনাকে মনে রাখতে হবে এমনটা হতেই পারে। চিকিৎসা বিদ্যায় এই অবস্থাকে Bell’s Palsy বলে। শুধু ঘুমিয়ে থাকার সময়ই নয়, ভ্রমণের সময়ও এমনটা হতে পারে। দেখবেন থুথু ফেলতে গিয়ে আপনার কষ্ট হচ্ছে- তখন বুঝবেন যে আপনার মুখটা বাঁকা হয়ে গেছে। আবার ঠাণ্ডা থেকেও এমনটা হতে পারে।
দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজে এমনও অনেক মানুষ রয়েছে যারা হঠাৎ করে মুখ বেঁকে যাওয়াকে জ্বীন-ভূতের আছর বা কাজ বলে চালিয়ে দিতে চান। আর সেই সুযোগে চলে ঝাড়ফুঁক। এতে রোগীর অসুস্থতা যেমন বেড়ে যায় তেমনি অনেক টাকা-পয়সাও নষ্ট হয়।
রহিমা খাতুন নামে এমনই এক মহিলাকে আমি রোগী হিসেবে পেয়েছিলাম। মুখ বাঁকা হয়ে যাওয়ার পর জ্বীন-ভূতের অনেকে চিকিৎসা (!) শেষে স্বজনরা তাকে আমার কাছে এনেছিলেন। ধারাবাহিক ফিজিওথেরাপি চলার এক পর্যায়ে রহিমা খাতুনের কাছে যা শুনলাম তাতে তো নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তিনি বলছিলেন এক কবিরাজ তাকে জানিয়েছিলেন অনেক বড় জ্বীন তাকে (রহিমাকে) ধরেছে। যে কারণে স্বামীর সঙ্গে এক বিছানায় থাকা যাবে না। আলাদা না থাকলে স্বামীর ক্ষতি হবে। যা হোক রহিমাকে আলাদা বিছানায় থাকতে হয়নি, তার সংসারও ভাঙ্গেনি বরং অল্প দিনের থেরাপিতেই তিনি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন।

ঘটনা-২:

বগুড়া শহরের চেলোপাড়া অন্তিম চন্দ্র রায় (ছদ্মনাম, তিনি তাঁর নাম প্রকাশ করতে চাননা) পেশায় একজন ব্যাংকার। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তিনি। নিয়মিত ওষুধও সেবন করেন। তো একদিন তিনি ওষুধ সেবন করতে ভুলে গেছেন। ফলে হঠাৎ করেই তার স্ট্রোক হয় এবং শরীরের ডান পাশটা অবশ হয়ে যায়। চিকিৎসা বিদ্যায় এমন অবস্থাকে বলে একমাইট প্যারালাইসিস। স্বজনরা তাকে আমার কাছে নিয়ে আসলেন। মধ্য বয়স্ক মানুষটা করুণ সূরে আমাকে বলতে লাগলেন, ‘মা গো আমি কী আবার আগের মতো সুস্থ হতে পারবো? অফিসে আর যেতে পারবো?’ আমি তাকে বললাম ‘কাকাবাবু ভাল করার মালিক ঈশ্বর। তবে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি।’ নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেওয়ার পর তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে ফিরতে পেরেছেন।

ঘটনা-৩:
বগুড়া বারের আইনজীবী আব্দুল মান্নান মণ্ডল।  পায়ের গোড়ালি হাড় বৃদ্ধিজনিত কারণে ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন।  পেইনকিলার বা ব্যাথানাশক ওষুধ সেবন করছিলেন। কিন্তু ওষুধ না খেলেই ব্যাথা শুরু হতো। এভাবে দীর্ঘ কয়েক বছর পেইনকিলার খাওয়ার কারণে এক সময় তার কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। পরিচিতি এক বন্ধুর মাধ্যমে তিনি আমাদের ফিজিওথেরাপি সেন্টারে আসেন। নিয়মিতি থেরাপি নেওয়ার পাশাপাশি কিছু ব্যায়াম এবং নিয়মকানুন শিখিয়ে দেওয়ার পর তিনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ম-ল আমাকে বলেছেন, তিনি মনে করতেন ফিজিওথেরাপি মানে এমনই একটা চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে হিট দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে আসার পর তার উপলদ্ধি হয়েছে থেরাপি মূলত এক ধরনের ব্যায়াম।’

লেখকঃ বাত-ব্যাথা প্যারালাইসি ইনজুরি রিহ্যাব ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ, বি.পি.টি (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) অতিথি প্রভাষক, আইএইচটি, বগুড়া।  চেম্বারঃ রিয়া ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল সেন্টার, শেরপুর রোড, কানুচগাড়ি, বগুড়া।