নন্দীগ্রামে ৬০, কাহালুতে ১৩ এবং বগুড়া মোহাম্মদ আলীতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০জন

বগুড়ার কাহালুতে ‘মজলিশ’-এর খাবার খেয়ে দেড়  শতাধিক অসুস্থ: ৮০জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:০২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৮৬ বার।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার চিরতা গ্রামে মৃত এক ব্যক্তির আত্মার মাগফিরাত কামনায় আয়োজিত ‘মজলিশ’ (চেহলাম জাতীয় অনুষ্ঠান)-এর খাবার খেয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরের পর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৮০জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 
সবচেয়ে বেশি ৬০জন ভর্তি হয়েছেন ওই গ্রামের নিকটবর্তী পাশের নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন ১৩জন এবং আরও ১০জন চিকিৎসা নিচ্ছেন বগুড়ার ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খাদ্যে বিষক্রিয়া জনিত কারণেই এত অধিক সংখ্যক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা তীব্র পেট ব্যাথা, পাতলা পায়খানা, বমি ও জ্বরের উপসর্গ নিয় হাসপাতালে আসছেন। তবে আতঙ্কের কিছু নেই রোগীরা দু’একদিনের চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান জানিয়েছেন  ঘটনাটি তারা তদন্ত করে দেখবেন।
কাহালু উপজেলার জামগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর আলম কামাল জানান, তার ইউনিয়নের চিরতা গ্রামের আকতারুজ্জামান ওরফে আকতার হুজুর নামে এক পল্লী চিকিৎসক চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন। তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দুপুরে বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় মজলিশের আয়োজন করা হয়। তাতে তিন থেকে চার হাজার মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়। সেখানকার খাবার খেয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অন্তত দেড়শ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই স্থানীয় ওষুধের দোকান কিংবা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ খেয়েছেন। তবে যারা খুব বেশি অসুস্থ হয়েছেন তারাই নিকটবর্তী নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।
 নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ওই মসজিলে অংশ নেওয়া আব্দুল খালেক জানান, তাদেরকে ভাত, গরুর মাংস ও মাছ দিয়ে আলু ঘাটি খেতে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘মজলিশের খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর রাত থেকে তীব্র পেট ব্যাথা শুরু হয়। সঙ্গে পাতলা পায়খানা। শনিবার সকালে স্থানীয় ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেয়েও কোন লাভ না হওয়ায় ওইদিন দুপুরে আমি নন্দীগ্রাম উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হই। আমার মত আরও অনেকে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’ 
কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে জহুরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাত থেকে তারও পেট ব্যাথা এবং পাতলা পায়খানা শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘আমি শনিবার সকাল থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া শুরু করি। কিন্তু পেট ব্যাথা কিছুতেই কমছিল না। রোববার বিকেল থেকে জ্বর শুরু হয়। ফলে সোমবার সকালে আমি হাসপাতালে ভর্তি হই।’ তার ধারণা মরহুম আকতারুজ্জামানের পরিবারের সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে এমন কেউ গরুর মাংসা বা মাছের ঘাটির মধ্যে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে থাকতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী জানান, ওই মজলিশের কয়েকদিন আগে মরহুম আকতারুজ্জামানের পরিবারের এক সদস্যের একটি খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তার ধারণা ওই বিরোধের জের ধরে খাবারের মধ্য বিষাক্ত কিছু মেশানো হতে পারে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর প্রধান ডা. তোফাজ্জল হোসেন ম-ল জানান, তার হাসপাতালে ২ ফেব্রুয়ারি শনিবার ১২জন ভর্তি হন। পরদিন রোববার ৪২জন এবং ৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার আরও ৬জন ভর্তি হন। এদের মধ্যে ৫জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও আতঙ্কের কিছু নেই। চিকিৎসা চলছে তবে তাদের পুরোপুরি সুস্থ দু’একদিন সময় লাগবে। 
কাহালু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তার হাসপাতালে বর্তমানে ১৩জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে সবাই আশাঙ্কামুক্ত। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, ওই হাসপাতালে দু’দিনে ১৬জন ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৬জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে এখনও ১০জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান জানিয়েছেন ঘটনাটি তারা তদন্ত করে দেখবেন। তিনি বলেন, ‘আমি একটি ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি। আজকেই (সোমবার) আমি ওই ঘটনাটি জানলাম। কেন কি কারণে একটি অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে এতগুলো মানুষ অসুস্থ হলো বিষয়টি অবশ্যই জানা দরকার। আমি বগুড়ায় ফিরে গিয়ে তদন্ত করবো।’