নদী থেকে উত্তোলন করা বালু কেনা-বেচাসহ গ্রাম্য বিরোধের জের

বগুড়া সদরের তেলিহারায় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতে বৃদ্ধ খুন

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১০:৫৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৯২ বার।

বগুড়া সদরের তেলিহারা গ্রামে বালু ব্যবসা এবং প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে যাওয়া এক স্কুল ছাত্রীকে ফিরিয়ে আনা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিপক্ষের মারপিটে মোকলেছার রহমান (৬০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনায় আরও তিনজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে শহরতলীর গোকুলে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 
নিহত মোকলেছার রহমান তেলিহারা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত লালমিয়া শাহের ছেলে। ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ জানায়, বগুড়া সদরের শেখেরকোলা ইউনিয়নের তেলিহারা উত্তরপাড়া এলাকায় করতোয়া নদী থেকে উত্তোলন করা বালু কেনা-বেচা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার ওই গ্রামের ৭ম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রী প্রেমের টানে প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। ফলে উত্তোলন করা বালুর কেনা-বেচা নিয়ে পুরনো সেই বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। ওই ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেওয়া হলে অভিযুক্ত সেই প্রেমিকের এক চাচাতো ভাইকে পুলিশ আটক করে। 
শেখেরকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ডালিম জানান, তার ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য ইমদাদুল হক সেই স্কুল ছাত্রীকে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করে তার বাবা-মার হেফাজতে দেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পালিয়ে যাওয়া স্কুল ছাত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এক পক্ষ প্রতিপক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। তারা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। নিহত মোকলেছার রহমান স্কুল ছাত্রীর পক্ষের ছিলেন।
বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান জানান, শেখেরকোলা ইউনিয়নের তেলিহারা উত্তরপাড়া এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য বেশ কিছুদিন আগে পাশের করতোয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে রাখা হয়। ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য ইমদাদুল হক ভাণ্ডারপাইকা গ্রামে ড্রেন নির্মাণের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে উত্তোলন করে রাখা সেই বালু ট্রাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কালভার্ট নির্মাণের জন্য তুলে রাখা বালু অন্যত্র নিয়ে যাওয়ায় প্রতিপক্ষ এই বলে সন্দেহ করেন যে, ইউপি সদস্য ইমদাদুল হক কোথাও বালু বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, ‘ওই সন্দেহ থেকে এক পক্ষ ওই বালু পরিবহনে বাধা দেন। এ নিয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তেলিহারা উত্তরপাড়া এলাকায় মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে ৩জন আহত হয়। পরে খবর পেয়ে মোকলেছার রহমান ঘটনাস্থলে গেলে তাকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। গুরুতর আহত মোকলেছারকে পরে পাশের টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে  বেলা ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।’
শেখেরকোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ডালিম জানান, তেলিহারা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আর কোন বালু উত্তোলন করা হয় না। শুধু একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য পনের দিন আগে কিছু বালু উত্তোলন করে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই কিছু বালু ভাণ্ডারপাইকা গ্রামে একটি ড্রেন নির্মাণের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এক পক্ষ সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে বলে গুজব ছড়ায়। ফলে গ্রামের এক পক্ষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে স্কুল ছাত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ অপর একটি অংশও যুক্ত হয়। ফলে অনাকাক্সিক্ষত একটি ঘটনা ঘটে।
বগুড়ায় পুলিশের গণমাধ্যম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, উত্তোলন করা বালুর ভাগবাটোয়ারা নিয়ে আগে থেকেই কিছু সমস্যা ছিল। তবে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া স্কুল ছাত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পুরনো বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছে। জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’