জুতো যখন আত্মহত্যায় ঝরে যাওয়া শিশুদের প্রতিনিধি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:২৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৫৪ বার।

জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ দুই শতাধিক ব্রিটিশ স্কুল-শিশু ২০১৭ সালে বেছে নিয়েছিল আত্মহননের পথ। সে বছর ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যানে লিপিবদ্ধ হয়েছিল স্কুল-শিশুদের ২২৬টি আত্মহননের তথ্য। তবে রাষ্ট্রের বিবেচনায় যা একটি পরিসংখ্যান মাত্র, আদতে তা ২২৬টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর সকরুণ স্বতন্ত্র গল্প। শিশুদের মধ্যে জেগে ওঠা আত্মহত্যার প্রবণতা রুখতে একটি দাতব্য সংস্থা ২২৬ জোড়া জুতোকে সেই ঝরে যাওয়া ২২৬ জীবনের প্রতিনিধি বানিয়েছে। চেসিং দ্য স্টিগমা নামের সংগঠনটি লিভারপুলের সেন্ট জর্জ হলের সিঁড়ির ধাপে ধাপে সেই জুতোগুলোকে রেখেছেন আত্মহত্যাবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।
 

গত দশ বছরে যুক্তরাজ্যে শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০১৭ সালে ১৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েদের আত্মহত্যার ঘটনা ছিল সর্বোচ্চ। আত্মহত্যাবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে পোস্ট করা হয়েছে সিঁড়িতে রাখা জুতোর ছবি। দ্রুত তা মানুষের মনোযোগ কেড়েছে। শেয়ার হয়েছে ১৫ হাজারেরও বেশিবার। সব শ্রেণী-পেশা-বয়সের মানুষের বোঝার মতো করে নেওয়া ওই কর্মসূচির জন্য দাতব্য সংস্থাটি প্রশংসাও পেয়েছে। এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, ‘হৃদয় বিদারক। সব বয়সের মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।’

দাতব্য সংস্থাটির কর্মী জেক মিলস ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেট্রোকে বলেন, আমরা রেডিও সিটি টক ও উপস্থাপক মাইক কোয়েলের কয়েক বছর ধরে কাজ করছি। মাইকের মেন্টাল হেলথ মান ডে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আমাদের এই কাজের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ২৪ ঘণ্টার সরাসরি অনুষ্ঠানটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলাম। অনুষ্ঠানটির শততম পর্ব পড়েছে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সপ্তাহের শুরুর দিনেই। শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার ভয়াবহ প্রবণতার কথা তুলে ধরতে দিনটি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।

জেক মিলস বলেন, ‘আত্মহত্যার সংখ্যা অনেকের কাছে হৃদয় বিদারক। কিন্তু অনেক মানুষ এগুলো সম্পর্কে সচেতন নয় কিংবা  সত্যিকার বাস্তবতা অনুধাবনে ব্যর্থ।’ তিনি মন্তব্য করেন, পরিসংখ্যানে উল্লেখিত প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য এক একটি জীবনের দুঃখজনক পরিণতির গল্প। আমরা এই বিষয়টি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। তাই হারিয়ে যাওয়া জীবনের দৃশ্যমান প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে আমরা জুতো ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জেক মিলস আরও বলেন, প্যাপিরাস এবং ওস্কার ফিল্পিস ফাউন্ডেশনের মতো দাতব্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে আমরা একটি আন্দোলন শুরু করতে পেরেছি। যা শুধু যে সচেতনতা তৈরির জন্যই নয়। এটাতে যে সহযোগিতা ও সাহায্য রয়েছে তা সম্পর্কে সচেতনতা তুলে ধরাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

চ্যাসিং দ্য স্টিগমা দাতব্য সংস্থাটি একটি অ্যাপসও চালু করেছে। হাব অব হোপ নামের এই অ্যাপটি ব্যবহার করে কাছের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র খুঁজে পাওয়া যায়। সামারিটানস নামের আরেকটি দাতব্য সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জটিলতায় সেবা দিচ্ছে। যে কোনোও ব্যক্তি দিনরাত যে কোনও সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ফোনে বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। শিশু ও তরুণদের জন্য ইয়ং মাইন্ডস নামের আরেকটি দাতব্য সংস্থাও কাজ করছে।