ব্যাচেলর, মৎস্য কুমারী ও লাভ বার্ডসও ছিল

মাঘের শেষে বগুড়ায় হয়ে গেল পিঠা উৎসব

অসীম কুমার কৌশিক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:৩১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫০৯ বার।

শুক্রবার সকাল থেকেই আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। জানতে পারলাম আজ বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তন চত্ত্বরে দিনব্যাপী পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। পিঠার কথা শুনেই ঠাকুমার সেই পিঠা গাছের গল্পটা মনে পড়লো। কল্পনায় ভেসে উঠলো ইয়া বড় বড় পিঠার গাছগুলো। যেখানে ঝুলে আছে নানা রঙের পিঠা। কল্পনার ঘোর কাটতে না কাটতেই পৌছে গেলাম পিঠা উৎসবে। 
বাহারি রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে অনেকগুলো স্টলই বসেছে সেখানে। ব্যাচেলর, মৎস্যরানী, হৃদয়হরণ, কামরাঙা, ডিমসুন্দরী, লাভবার্ডস, কুশলী, চকলেট, বকুল, ফুল, ভেজিটেবল আরো কত রকমের পিঠা! দাম ৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।

পিঠাগুলো দেখেই যে কারো জিভে জল চলে আসবে। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না।

স্টলগুলোর মধ্যে মাটিডালী উচ্চ বিদ্যালয়ের স্টলে ১১ রকম,  ফয়েজুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের স্টলে ৮ রকম, ইউনিক পাবলিক স্কুলের স্টলে ৩২ রকম, ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের স্টলে ২০ রকম, ভান্ডারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের স্টলে ২২ রকম, বগুড়া ওয়াই এম সি এ স্কুল এ্যান্ড কলেজের স্টলে ১৮ রকম এবং মৌমিলা পিঠা ঘর নামক স্টলে ২৪ রকমের বাহারি সব পিঠা সাজানো রয়েছে। 

যাইহোক জানতে পারলাম বগুড়া লিটল থিয়েটার ও ভোর হলো এর আয়োজনে এবং বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট,  বগুড়া থিয়েটার এবং কলেজ থিয়েটার এর সহযোগিতায় এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। 

সাড়ে ৯ টার দিকে খোঁপায় গাঁদা ফুল ও হলদে শাড়ি পরিহিত এক ফুটফুটে ছোট শিশুকে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা খাওয়ানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল করিম দুলাল।

মাঘের সূর্য তখনও মুখ ভার করে ছিলো। উদ্বোধনের পরপরই কবি সুকান্তের কবিতা আবৃত্তি করলেন বগুড়া থিয়েটারের মঞ্চকর্মী কনক কুমার পাল অলক। কবিতার রেশ রেখেই আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে অমেয় গানের সুর ও বাণী ছড়িয়ে দেয় হিন্দোল সাংস্কৃতিক একাডেমির শিল্পীবৃন্দ।  এছাড়াও কবিতা আবৃত্তি করেন বরেণ্য আবৃত্তিকার শ্রাবণী সুলতানা। কলেজ থিয়েটারের নাট্যকর্মিরা ফিউশান বাউল পরিবেশন করেন। 

উদ্বোধনী বর্ণিল আয়োজনে রোমেনা আফাজ মুক্তমঞ্চের সামনে উপস্থিত দর্শকবৃন্দ শীতকাতড়তা থেকে বেড়িয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। 

উদ্বোধনী ওই আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন লিটল থিয়েটারের পরিচালক নাট্যজন তৌফিক হাসান ময়না। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী, মাটিডালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাল মিয়া, দৈনিক করতোয়া পত্রিকার বার্তা সম্পাদক প্রদীব ভট্টাচায্য শংকর, ইউনিক পাবলিক স্কুলের চেয়ারম্যান তনছের আলী প্রমানিক এবং  নান্দনিক নাট্য দলের খলিলুর রহমান চৌধুরী।  উদ্বোধনী ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শিশু সংগঠক ও বগুড়া থিয়েটারের সহ সভাপতি এড. পলাশ খন্দকার। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মঞ্চকর্মী আমজাদ হোসেন শোভন।

এসময় বক্তারা বলেন, আবহমানকাল ধরেই বাঙালির খাদ্যাভাসের সংস্কৃতির সাথেই জড়িয়ে রয়েছে পিঠা। কিন্তু বর্তমান সময়ে শহর কিংবা গ্রামে আর পিঠা খাবার ধুম তেমন একটা চোখে পরে না। ফলে নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে পিঠার বাহারি নাম কিংবা নানা স্বাদের কথা। সেকারণেই এমন আয়োজন সকলকে বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের সাথে একাত্ম করবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করলেন হিন্দোল সাংস্কৃতিক একাডেমি এবং নাটক "কাজীর বিচার" পরিবেশন করলেন কলেজ থিয়েটার। নাটকটির রচনা করেছেন কলেজ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ও নির্দেশনায় ছিলেন নাট্যজন তৌফিক হাসান ময়না। 

আমার পাশেই রিফাত নামের একটি ছেলেকে জিজ্ঞেস করতেই সে জানালো, বেছে বেছে আমার প্রিয় পিঠাগুলোই কিনে খাচ্ছি। বেশ মজা লাগছে। আরেকজন অতিথি আবুল মালেক পুন্ড্রকথা’কে জানালেন, আজকের আবহাওয়াটা পিঠা খাওয়ার জন্য খুবই উপযোগী। আমিও এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি। পাশের স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা জান্নাতুল ফেরদৌস নামে আপুটি বললেন, বৃষ্টির জন্য আসতে একটু দেরি হয়েছে। তবুও ভালো লাগছে।  

যাইহোক বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্য দিয়েই শেষ হলো বাহারি পিঠা উৎসব।