মুখে যন্ত্রণার চুল, চোখে আকাশচুম্বী স্বপ্ন

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:৪৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৬৩ বার।

স্কুলের প্রথমদিন তাকে দেখে সহপাঠীরা পালিয়ে যায়। অন্য গ্রামে গেলে সমবয়সীরা ‘বানর’ বলে ব্যঙ্গ করে। কখনো কখনো শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কষ্ট হয় ভালো করে দেখতে। ভারতের মধ্যপ্রদেশের রতলম জেলার ১৩ বছর বয়সী ললিত পটিদার এভাবে বেঁচে আছে। বেঁচে আছে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে।

কয়েক দিন ধরে ললিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পরিচিত মুখ। ডেইলি মেইল থেকে শুরু করে মিররের মতো পত্রিকা তাকে নিয়ে খবর ছেপেছে। সেখান থেকে জানা গেছে, বিরল সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয় সে। প্রথমে শরীরে ছোট ছোট চুল ছিল। এখন সেগুলো বড় হয়ে গেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যার নাম ‘hypertrichosi’।

‘মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যদি অন্যদের মতো হতে পারতাম! বন্ধুরা প্রথমে খেলতে চাইতো না। স্কুলে কেউ পাশে বসত না। আমাকে দেখলে পাথরও ছুড়ত,’ মিররের কাছে এভাবে নিজের অতীত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেয় ললিত। খবর দেশ রুপান্তর 

ললিতের ৪২ বছর বয়সী মা পার্বতীবাঈ পটিদার সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। ১৪ জনের সংসার তার। এর মধ্যে মেয়ে পাঁচজন। ছেলের আশায় অনেক জায়গায় মানত করেন। তারপর একদিন ললিতের জন্ম হয়। সন্তানকে দেখে নিজেই বিস্মিত হয়েছিলেন।

‘জন্মের আধা ঘণ্টা পর আমি ললিতকে দেখি। সব জায়গায় চুল দেখে অবাক হয়েছিলাম।’

ললিতকে অনেক জায়গায় ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোনো উপকার পাওয়া যায়নি। সব জায়গা থেকে বলা হয়েছে, এর কোনো চিকিৎসা নেই।

ললিতের বাবা পেঁয়াজের ব্যবসা করেন। তিনি জানান, একবার ছেলেকে বরোদার একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সুফল পাননি।

‘ললিতের বয়স তখন দুই বছর। একটি বড় হাসপাতালে নিয়ে যাই ওকে। বেশ কয়েক জন ডাক্তার পরীক্ষা করেন। আমাদের বলা হয় এর কোনো চিকিৎসা নেই। যদি কোনো উপায় বের করা যায়, তাহলে নাকি জানাবে।’

এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ললিত থেমে থাকতে চায় না। মা-বাবার প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ। একদিন পুলিশ হয়ে তাদের সেবা করতে চায়।

‘চুল না থাকলে খুব ভালো হতো। কেউ আমাকে ব্যঙ্গ করত না। আমি পুলিশ হয়ে সব চোরকে জেলে দেব। সৎ থেকে আয় করতে চাই। মা-বাবা আমার জন্য অনেক কিছু করেছে। তারা বৃদ্ধ হলে আমি কষ্ট দেব না।’

ললিতের শিক্ষকেরা জানান, সে লেখাপড়ায় খুব ভালো। ভালো খেলাধুলায়ও।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবুলাল বলেন, ‘ললিত দুই বছর ধরে আমার ছাত্র। পড়ালেখা এবং খেলাধুলায় খুব ভালো। ক্লাসে আগে সবাই ওকে ভয় পেত। এখন সবার প্রিয়।’

ললিতের ‘সবচেয়ে প্রিয়’ এক বন্ধুও আছে। নাম তার দিলীপ রাঠোর। কেউ ললিতকে আক্রমণ কিংবা ব্যঙ্গ করলে এই দিলীপ তাকে রক্ষা করে।

‘ললিত এখন আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। ওকে প্রথমবার দেখে আমিও ভয় পেয়েছিলাম,’ বন্ধুর কথা বলতে বলতে দিলীপ কিছুটা আবেগী হয়ে যায়, ‘ওকে কেউ কিছু বললে আমার মাথা ঠিক থাকে না। এখন সব সময় একসঙ্গে থাকি। ও একদিন নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাবে…।’