অসহ্য মাথাব্যথায় করণীয়

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:০৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৫ বার।

মাথাব্যথা অতি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। মাথাব্যথা বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক সমস্যা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা মারাত্মক রোগ নির্দেশ করে না। দুশ্চিন্তা ও মাইগ্রেন শতকরা ৯০ ভাগ মাথাব্যথার জন্য দায়ী।

মাথাব্যথা নানা কারণে হয়ে থাকে। টেনশন কিংবা দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা, মাইগ্রেন, ক্লাস্টার, সাইনাস কিংবা চক্ষুজনিত মাথাব্যথা, হরমোনজনিত মাথাব্যথা, ব্রেন টিউমার, মগজের ভেতর রক্তপাত, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে।

মাইগ্রেন

শতকরা ১০-১৫ ভাগ লোক এ ধরনের মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়। মাইগ্রেন মেয়েদের বেশি হয়। সাধারণত ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মাইগ্রেনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাইগ্রেনের আক্রমণের সময় মগজের রাসায়নিক বাহক সেরোটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং মাথা বাইরের ধমনিগুলো প্রসারিত হয়।

লক্ষণসমূহ

-মাথাব্যথা সাধারণত মাথার একদিকে হয়। তবে ব্যথা সমস্ত মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

-মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব হয়, এমনকি বমিও হতে পারে।

-রোগী তখন আলো সহ্য করতে পারে না।

-এ ধরনের মাথাব্যথা কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলতে পারে; কিন্তু দিনব্যাপী খুব কম হয়।

-মাইগ্রেন রোজ, সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপী হতে পারে।

-দুশ্চিন্তা, মদ্যপানে মাথাব্যথা বেশি হয়। পনির, চকোলেট ইত্যাদি খাবারেও মাথাব্যথা বেশি হয়। ঘুমালে মাথাব্যথা কমে যায়।

-মাইগ্রেনের বংশগত ইতিহাস থাকতে পারে।

-সাধারণত কোনো স্নায়বিক উপসর্গ থাকে না।

-হার্টের অলিন্দে ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে রোগী কোনো ধরনের হার্টের সমস্যা অনুভব নাও করতে পারেন।

চিকিৎসা

যেসব কারণে মাইগ্রেনের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়, তা পরিহার করতে হবে। স্বল্পস্থায়ী চিকিৎসা হিসেবে প্যারাসিটামল, এরগোটামিন, পিজোটিফেন, প্রপ্রানালোল, এমিট্রিপটাইলিন ব্যবহার করা যেতে পারে। হার্টে ছিদ্র আছে কি-না তার জন্য ইকো কালার ডপলার পরীক্ষা করে হার্টের চিকিৎসার দরকার হতে পারে।

ক্লাস্টার

ক্লাস্টার মাইগ্রেনের চেয়ে কম হয়। এ ধরনের মাথাব্যথা মধ্যবয়স্ক পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু মাইগ্রেন নারীদের বেশি হয়।

লক্ষণসমূহ

-তীব্র যন্ত্রণাদায়ক মাথাব্যথা।

-মাথাব্যথা সাধারণত এক চোখে ও চোখের পেছনে হয় এবং সেদিকের চোখ লাল হয়, পানি পড়ে। নাক দিয়েও পানি পড়ে।

-মাথাব্যথা হঠাৎ করেই হয়ে থাকে। পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ব্যথা সবচেয়ে বেশি হয় এবং আধ ঘণ্টার মধ্যে সেরে যায়।

-মাথাব্যথায় ঘুম ভেঙে যেতে পারে।

-মদ্যপানে মাথাব্যথা বেশি হয়।

-মাথাব্যথা কয়েক সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী হয় এবং দিনে কয়েকবার করে হয়।

চিকিৎসা

চিকিৎসা হিসেবে উচ্চমাত্রায় এনএসআইডি অথবা এরগোটামিন এবং ভেরাপামিল ব্যবহারে রোগীর সমস্যা কমতে দেখা যায়। অর্ধেকের বেশি রোগী ফেস মাস্কের মাধ্যমে ১০০ ভাগ অক্সিজেন শ্বাসের সঙ্গে নিয়ে উপকার পায়। এসব রোগীর ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করা উচিত।

সাইনাসের মাথাব্যথা

যাদের ঘন ঘন সর্দি-কাশি হয়, তাদের সাইনোসাইটিস থেকে এ ধরনের মাথাব্যথা হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহ

-ঠাণ্ডা কিংবা সর্দি-কাশি লাগার সময় কিংবা পরে এ ধরনের মাথাব্যথা শুরু হয়।

-ব্যথা মুখমণ্ডলের কিংবা মাথার কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে।

-মাথাব্যথা সকালের দিকে বেশি হয়।

-হাঁচি-কাশি দিলে ব্যথা বেশি হয়। হঠাৎ করে মাথা নাড়লেও ব্যথা বেশি হয়।

-শীতকালে বেশি হয়।

-রোগ নির্ণয়ের জন্য এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করতে হবে।

চিকিৎসা

চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টামিন, ডিকনজেস্ট্যান্ট কিংবা নাকের স্প্রে দেওয়া হয়।

চক্ষুজনিত মাথাব্যথা

শতকরা ৫ ভাগ মাথাব্যথা চোখের কারণে। চোখের দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে মাথাব্যথা হতে পারে। অনেকক্ষণ পড়াশোনা করা, সেলাই করা, সিনেমা দেখা কিংবা কম্পিউটার স্ট্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথাব্যথা হতে পারে। চোখের কোনো রোগ, যেমন- কর্নিয়া, আইরিশের প্রদাহ, গ্লুকোমা এবং রেট্রোবালবার নিউরাইটিস ইত্যাদি কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। চক্ষুজনিত মাথাব্যথা সাধারণত চোখে, কপালের দু'দিকে কিংবা মাথার পেছনে হয়ে থাকে। চক্ষুজনিত মাথাব্যথায় চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

হরমোনজনিত মাথাব্যথা

নারীদের মাসিকের সময় হরমোনের ওঠানামার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে মাথাব্যথা হতে পারে। মাসিক চক্র শেষ হলে কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া বন্ধ করলে এ ধরনের মাথাব্যথা ভালো হয়ে যায়।