সহপাঠিনীর খাওয়ার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণের জের

বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের ক্যাফেটেরিয়ায় ভাংচুর চালিয়েছে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৩:০৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৯৭ বার।

সহপাঠিনীদের খাওয়ার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করায় ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা সোমবার দুপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ক্যাফেটেরিয়ার আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। হামলাকারীরা ভিডিও ধারণকারী ওই ক্যাফেটেরিয়ার দুই কর্মচারীকেও বেধড়ক পিটিয়েছে। 
বাধা দিতে গিয়ে শজিমেক হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ও ইন্টার্ণ চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন কর্মচারী লঞ্ছিত হয়েছেন। পরে ওই হাসপাতালের আনসারসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা একজোট হয়ে ভাংচুরকারী ময়মনসিংহ সরকারি আনন্দ মোহন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে এ ঘটনায় কোন পক্ষই মামলা করেনি।
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিজ্জামান জানান, বিকেলে হাসপাতাল প্রশাসনের উপস্থিতিতে তিন পক্ষ পুরো ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং মামলা না করার সিদ্ধান্তের কথাও জানান। তিনি বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাফেটেরিয়ার কয়েকটি গ্লাস ও চেয়ার ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে সব পক্ষ সমঝোতায় রাজি হওয়ায় ওই ঘটনায় কোন মামলা দায়ের হয়নি।
পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহ সরকারি আনন্দ মোহন সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের পক্ষ থেকে সোমবার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। ওই কলেজের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী দুপুরের খাবার খেতে সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ‘হাসপাতাল ক্যাফেটেরিয়া’য় যায়। ওই ক্যাফেটেরিয়াটি ‘আকবরিয়া হোটেল’ নামে শহরের একটি প্রতিষ্ঠান লিজের মাধ্যমে পরিচালনা করে। 
বগুড়া সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর মঞ্জুরুল হক ভূইয়া জানান, শিক্ষার্থীরা যখন খাচ্ছিল তখন ওই ক্যাফেটেরিয়ার দুই কর্মচারী কয়েকজন ছাত্রীর খাওয়ার দৃশ্য তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও করছিল। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের সহপাঠীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জানান, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাংচুর শুরু করে। তখন গোটা ক্যাফেটেরিয়া জুড়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় সেখানে খেতে আসা শজিমেক হাসপাতালের বেশ কয়েকজন ইন্টার্ণ চিকিৎসকও লাঞ্ছিত হন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে ভিডিওধারণকারী নামজুল ও শাহারুল নামে দুই কর্মচারীকে বেধড়ক পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শজিমেক হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় গেলে তাদেরকেও লাঞ্ছিত করা হয়। 
ওই হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ফয়সাল জানান, হাসপাতালের সহকারি পরিচালকসহ ডাক্তারদের মারপিট করা হচ্ছে- এমন খরব পেয়ে তারা এবং আনসার সদস্যরা একজোট হয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এরপর ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেওয়া হয়। এর পর পরই বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। 
ওই ক্যাফেটেরিয়ার ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফ এবং রোগী ও তাদের স্বজনদের বাইরে কখনোই এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে এখানে খাওয়া হয় না। কিন্তু হোটেলের মালিক পক্ষের নির্দেশে সোমবার দুপুরে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের ১৭৪ শিক্ষার্থীর খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ময়মনসিংহ সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক আশরাফুজ্জামান জানান, ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শিক্ষা সফরে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে দুপুরের খাবারের জন্য তারা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়েছিলেন।
বগুড়ায় পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, ঘটনার পর পরই হাসপাতাল প্রশাসন সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানেই সমঝোতা হয়। বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম রসুল জানান, ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানটি বাইরের এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়ে ভুল করেছেন। তারা এটি না করলে অপ্রীতিকর কিছুই ঘটতো না। তিনি বলেন, ‘তারা হাসপাতাল প্রশাসনের কারও অনুমতি পর্যন্ত নেননি। এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’