২১৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল চবি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২১ ১৩:২৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৯ বার।

ঘুমভাঙা ভোরে বনমোরগের ডাক তো, সন্ধ্যায় পাখিদের কিচিরমিচির ঝগড়া। দুপুরজুড়ে থাকে ঘুঘুপাখির অবিরাম ডাকাডাকি। ফরেস্ট্রি রোড বা কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতে মনে হতে পারে ক্যাম্পাস পাখিদের দখলে চলে গেছে। বৈচিত্রময় এ ক্যাম্পাসকে বলা যায় পাখিদের রাজ্য। এখানে ২১৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল। আরও রয়েছে ১৭ প্রজাতির ব্যাঙ, ৬৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্য বিভাগ আয়োজিত 'বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস' উদযাপন অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহসান এ তথ্য জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রণীবিদ্যার শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল 'মানুষ ও পৃথিবী বাঁচাতে: বন ও জীবিকা'। 

'চিটাগাং ইউনিভার্সিটি বার্ড ক্লাব' এবং 'ভেনম রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ' এ অনুষ্ঠানের সহযোগী ছিল। ২০১৪ সাল থেকে ক্যাম্পাসে দিনটি উদযাপন করে আসছে প্রণীবিদ্যা বিভাগ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বন মোরগ, মথুরা, সবুজ তাউরা, কাঠ শালিক, রেড হেডেড, ভীমরাজ, হাঁড়িচাচা, কানাকোয়া, কাবাসি, চন্দনা টিয়া, মদন টিয়া, কানাকুয়া, শিষধামা, হলদে বক, মালকোহা, পাকড়া মাছরাঙা, বসন্ত বাউরি, রুপাস নেকড, বেনেবউ এবং মৌটুসীসহ ২১৫ প্রজাতির পাখি রাজত্ব করে এই ক্যাম্পাসে।  খবর সমকাল অনলাইন 

ফরিদ আহসান জানান, ২১৫ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১০৮টি গায়ক ও ১০৭টি অগায়ক পাখি রয়েছে। পাখিগুলোর মধ্যে ১৬০টি প্রজাতির পাখির স্থায়ী নিবাস ক্যাম্পাসেই। ৫১টি অতিথি পাখি হিসেবে বিভিন্ন মৌসুমে ক্যাম্পাসে আসে, আবার চলে যায়। চারটি প্রজাতির পাখি রয়েছে যারা মাঝেমধ্যে আসে। এছাড়া বন্যশূকর, সজারু, বনরুই, মায়া হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ অন্যান্য প্রাণীর দেখা মেলে।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি পাখি বেড়েছে ক্যাম্পাসে। এমনিতেই সেগুলোর দেখা মিলেছে। জরিপ করে এগুলো নিয়ে লেখা বের হয়নি। ফরিদ আহসান বলেন, অতিরিক্ত বন উজাড়, বিনা কারণে গাছ কাটার ফলে বন্যপ্রণী হুমকির মুখে। তবে আমরা সবাই যদি সচেতন হয়ে উঠি তাহলে তাদের টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, মানুষ এবং অনান্য প্রাণী একে-অন্যের ওপর নির্ভরশীল। বন্যপ্রাণীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই বন্যপ্রাণী না থাকলে একদিকে প্রতিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে ভারসম্যহীনতা চলে আসবে।

প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠপুস্তকের শিক্ষার পাশাপাশি এই ধরণের সচেতনতামূলক আয়োজন প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- প্রক্টর রবিউল হাসান, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওবায়দুল হক, ভেনোম রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশের প্রধান গবেষক অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ এবং চট্টগ্রাম বার্ড ক্লাবের উপদেষ্টা ডা. মহিউদ্দিন সিকদার।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শফিউল আলম সমকালকে বলেন, 'পরিবেশ রক্ষায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গণসচেতনতা। পরিবেশ বা জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ফলে কী ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে তা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মানুষের এই দায়িত্ব নিতে হবে।'