বগুড়ায় এপিবিএনের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে শুনলো মুক্তিযুদ্ধের গল্প

দোস্ত আউয়াল
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:২৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৪৩ বার।

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে শোনানো হবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প। বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজের (এপিবিএন) শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছিলো টানটান উত্তেজনা। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। এমনই এক পরিবেশে উপস্থিত ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝে রণাঙ্গনের বীরত্বগাঁথা শোনালেন মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম ভোলা। বুধবার সকাল ১০টায় বগুড়া জেলা প্রশাসন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়া’র যৌথ উদ্যোগে এপিবিএন মিলনায়তনে “মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন” শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ। 

মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম ভোলা শোনালেন মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা। তিনি বলেন, ভারতের দেরাদুনে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শেষে বগুড়া জেলার মানক্যার চর এবং গাবতলী এলাকায় তিনি যুদ্ধ করেছেন। তিনি তাঁর স্মৃতিকথায় রাজকারদের অপকর্মের বিবরণও তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। মুক্তিযোদ্ধারা দেশমাতৃকার জন্যই জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন। তিনি এসময় তাঁর সহযোদ্ধা প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান পটলের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করেন। 

এরপর স্মৃতিকথা শোনান বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বগুড়ার সাবেক সদর উপজেলার কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হাসান মোজাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় তার চারটি অপারেশনের কথা তুলে ধরেন।
 

অনুষ্ঠানে আগত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী গভীর মনযোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা শোনেন। অনুষ্ঠান শেষে কুইজ ও প্রশ্নোত্তর পর্বে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বই বিতরণ করা হয়। 
 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, 'জাতির আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানা ও চর্চার বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করতে সকলকে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০লক্ষাধিক শহীদ ও ৬ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রোমের বিনীময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশ। বগুড়া জেলা প্রশাসন আগামীতেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা সহ পাশে থাকবে।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ৪ এ,পি,বিএন-এর সহ-অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) আবু সাইম। তিনি তার বক্তব্যে আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চেতনায় ধারন করে দেশ সেবায় এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হয়ে বই পড়ার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করেন।  

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এপিবিএনের প্রধান শিক্ষক এটিএম মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়ার উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ডা. আরশাদ সায়ীদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়া’র সমন্বয়কারী এ টি এম রাশেদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাকে উত্তরীয় ও ফুল সহ বই উপহার দিয়ে সম্মান জানানো হয়। অতিথিবৃন্দকে শুভেচ্ছা উপহার দেয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের গল্পের বই। ধারাবাহিক এ অনুষ্ঠান পর্যায়ক্রমে বগুড়া জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে। “মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন” অনুষ্ঠানে এ পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৬৫০জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।