রোববার বাদ যোহর আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে প্রথম জানাজা

প্রবীণ রাজনীতিবিদ বগুড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আর নেই

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪০৭ বার।

বগুড়ার প্রবীণ রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আর নেই। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। তার ছোট ছেলে মাসুদুর রহমান মিলন বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি। রোববার বাদ যোহর বগুড়ার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
স্বজনরা জানান, মমতাজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কিডনি জটিলতাসহ  বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি গত ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতে যান। এক সপ্তাহের চিকিৎসা শেষে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন।
মমতাজ উদ্দিনের ভায়রা ভাই বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ আহসান হাবিব জানান, দেশে ফেরার পর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে তাকে বগুড়া ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে শজিমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তার এরপর তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।’ 
মমতাজ উদ্দিনের রাজনৈতিক জীবন
মমতাজ উদ্দিন ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই পদে দায়িত্ব পালনকালেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর মমতাজ উদ্দিন ১৯৭২ সালে যুবলীগের বগুড়া জেলা কমিটির আহবায়ক নির্বাচিত হন। তার দু’ বছর পর ১৯৭৪ সালে তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন।
মমতাজ উদ্দিন ১৯৮২ সালে আওয়ামী লীগ বগুড়া জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরশাদের শাসনামলে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ওই পদে প্রায় এক দশক দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৪ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। তার প্রায় দুই বছর পর ২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিনিয়র সদস্য (ক্রমানুযায়ী দ্বিতীয় সদস্য) নির্বাচিত হন।
প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় মমতাজ উদ্দিন ১৯৮৬ সালে বগুড়া-৬ (সদর) আসন থেকে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে তাকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে মহাজোটের স্বার্থে পরে সেখানে জেলা জাসদ সভাপতি রেজাউল করিম তানসেনের প্রার্থীতা চুড়ান্ত করা হয়।
মমতাজ উদ্দিন আরও যেসব সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন
রাজনীতিবিদ মমতাজ উদ্দিন একাধারে ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একাধিকবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছন। পাশাপাশি তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এ একাধিকবার পরিচালক নির্বাচিত হন। কয়েক বছর আগে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ‘প্রভাতের আলো’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি ওই পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। বগুড়া প্রেসক্লাবের সদস্য মমতাজ উদ্দিন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বগুড়া ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতিও ছিলেন।