রেশমা [চতুর্থ পর্ব]

সাজিয়া আফরিন সোমাঃ
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০১৮ ১৭:৪৫ ।
শিল্প ও সাহিত্য
পঠিত হয়েছে ৪৮৩ বার।

হাতে একেবারেই সময় ছিলোনা, বাড়িতে কোন ছেলে মানুষও নাই,আর রইসও এই বিয়েতে অ-খুশি তাই সব দায়িত্ব সালেহাকেই নিতে হচ্ছে। বাড়িতে থাকে কাজের ছেলে হেদায়েত। সালেহা সবাই কে দাওয়াত দিয়ে একটা চিঠি লিখে হেদায়েতের হাতে পাঠিয়েছিলো কাছের সব আত্মীয়দের বাড়ি।

বাড়িতে মুরব্বীরা সবাই এসেছে বিয়ের দাওয়াতে। একেক জন একেক ভাবে কথা বলছে,কেউ সালেহাকে স্বান্তনা দিচ্ছে কেউ বা পরামর্শ। "দুলু বুবু" রইস এর ফুপাতো বোন, তাও আবার নিজের ফুপু না। তার পরেও নিজের বোনের মতোই সম্পর্ক। দুলু বুবু যেনো এ বাড়ির মেয়ে! সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। সেই দুলু বুবু সকাল থেকেই চিৎকার করছে ,সে ভীষন রেগে আছে সালেহার উপর-
দুলু-"বলছিলাম আমার একটা মেয়েকে নে,মানুষ কর নিজের মতো করে। কি যে হলো দুই মাস থুয়্যা পাঠায় দিলি। ক্যান নিজেদের ভিতর থাকতো কত ভালো হতো? আমার তো ইচ্চা আছিলো তোর মতো করে মেয়ে মানুষ করমু। তুই যকন নিলু তকন মনে মনে খুশিই হছনু"। কিন্ত কপাল!!

সালেহা- বুবু আমি তো চাইছিলাম কিন্তু দুলাভাই একেক সময় একেক কথা কয়,আগে কইছিলো বিয়ের সময় জমি দিলেই হবি। ডলিকে নেওয়ার পর বলা শুরু করলো আগেই তাক ৪ বিঘা জমি দিতে হবি আর বিয়ের সময় বাকী ৬ বিঘা। তা না হলে ডলিকে রাখতে দিবি না। এরকম হুমকি ধামকি দিলে কি বাচ্চা নেওয়া যায়,দুলু বু আপনিই বলেন?

দুলু- " সে মানুষ ক্যাংকা তা আমার চেয়ে ভালো কে জানে? এতো লোভ-লালসা হলে কি তাকে মানুষ কওয়া যায়,তুই বল দেকি সালে?"

সালেহা- " হ বুবু। ছোলডাক থুলেতো বাড়ি ভরে উঠতো। আম্মা মন মরা হয়ে থাকে,সন্ধ্যার পর পুরা বাড়ি ভুতের বাড়ি হয়,আপনার ভাই কতক্ষণ আর আমার মতো এই বুড়ির সাথে সময় পার করবে কন?"

দুলু- "আমার ছোল নিবুনা ভালো কতা,ক্যান এতিম বাচ্চা নিলে কি হতো,তাই বলে তুই সতীন আনবু ঘরে? আরে পাগলীও তার স্বামীকে কাউরে দিতে চায় না। আর তুই? এখন কতা শুনতে খারাপ লাগিচ্চে পরে ঠিকই আমার কতা মনে হবি যখন তোর নিজের ভিটাও চলে যাবি তকন!

সালেহা- বুবু এতিম,জায়গির তো কম রাখিনি বাইরের বাড়িত। দেখেন গিয়া কই থ্যাকা,কই থ্যাকা ছোট বড় সব এ্যাসা আছে। হেদায়েতের বউ তো সারাদিন তাদের খাওয়া পরার কাজ করে। কিন্তু নিজের বলেও তো কিছু আছে,তাই না বুবু?

আর আমার কতা? সে আমি ভাবিনা। আমি খালি চাই খাঁ বংশ যেনো টিকে থাকে,ভিটা মাটি আগলে রাখার কেউ আসুক। মা বলে কেউ ডাকুক।

দুলু- "আরে পাগলীরে তুই!!! সতীন কি দিবে তোক তার ছোল? দুনিয়া জায়গাডা বড়ই খারাপ,তুই জানিস না"।

সালেহা -" বুবু আমি বলে-কয়েই আনতেছি,সব ছোট বউকে দিয়া দিমু আর আমাক দিবে খালি ওর ছোল ডা"।

দুলু- কি জানি কি কস্ তুই বুঝিনা। আল্লাহ য্যান তোর ইচ্চা পুরণ করে খালি সেডাই দোয়া করি।"

সালেহা ভাবে, কত শখ করে দুলু বুর মেয়েটাকে পালতে নিছিলো সে। কত স্বপ্ন ছিলো মেয়েটাকে নিয়ে। বাড়িটা যেনো শান্তির জায়গা ছিলো। ৬ মাসের বাচ্চা ছিলো ডলি। কি সুন্দর করে হাসতো। রইসও তখন ডলিকে নিয়ে আনন্দে থাকতো। কিন্তু না ডলির বাবা জমি-জমি করে বাচ্চাটাকে একদিন নিয়ে গেলো। সালেহা এমন মানুষের সাথে কোন লেনদেন করতে চায়নি। সেই কষ্ট আর অপমানবোধ থেকে সালেহা চায় নিজের সন্তান

সালেহা উঠে পরে দুলু বুবুর পাশ থেকে। অনেক কাজ তার হাতে। আজ সে যাবে বউ আনতে এমনটাই কথা ছিলো,নিজে হাতে সাজিয়ে আনবে। কিন্তু মুরব্বীরা কেউ তাকে যেতে দিবে না। তাই সালেহা বশির উদ্দিনের কাছে চিঠি লিখতে বসলো। চিঠিটা ওদের কারো হাতে পাঠাবে আজ।

শ্রদ্ধেয় আব্বা,
আমার সালাম নিবেন। আম্মা,বড় ভাই,ভাবীদের আমার সালাম জানাবেন আর ছোটদের স্নেহ। কন্যা বিদায়ের দিনে একজন বাবার মন ও শরীরের অবস্থা কেমন থাকে তা আমি আমার বাবাকে দেখে জেনেছি,তবুও আশা করবো এবং দোয়া করবো আপনি ভালো আছেন এবং থাকবেন। সন্তানের দোয়া আল্লাহপাক কবুল করবেন নিশ্চয়।

আব্বা,অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে লিখতে বসেছি আজ,কারন আমি আপনাকে কথা দিয়ে এসেছিলাম যে আমি নিজ হাতে আমার বোনকে সাজিয়ে নিয়ে আসবো,কিন্তু বাড়ির আত্মীয় আর মুরব্বীদের কথা অমান্য করে যাওয়ার দূঃসাহস আমার নাই। তাই আপনার কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এই অভাগা মেয়েকে ক্ষমা করে দিবেন।

আমি অধীর হয়ে অপেক্ষা করছি আমার বোন এর জন্য। আল্লাহপাক সহায় হলে আমার অপেক্ষা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে।

পরিশেষে আপনাদের সবার মঙ্গল কামনায় শেষ করছি। দুই মেয়ে রইলো একসাথে, যখন মন চাইবে দেখতে চলে আসবেন আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

আগামীকাল আপনাদের জন্য পথ চেয়ে থাকবে আপনার এই মেয়ে।

ইতি
আপনার মেয়ে
সালেহা

(চলবে)