শাজাহান খানের নেতৃত্বে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৩৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৯ বার।

সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খানকে প্রধান করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়।

সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান।

একই সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নেতৃত্বে তিন মন্ত্রীর সমন্বয়ে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ দুই কমিটিকে আগামী ১৪ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ইজিবাইক ও ব্যাটাচালিত যানবাবহন বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে। আগামী মার্চ থেকে প্রতি মাসে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। চালক সঙ্কট কাটাতে দেশের সব যুব উন্নয়ন কেন্দ্র ও টিটিসিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে যানজটপূর্ণ শহর ঢাকা। ওবায়দুল কাদের এ প্রতিবেদনকে ঈর্ষার ফল বলে দাবি করেছেন।

সভা শেষে তিনি বলেন, 'এটা বাস্তব চিত্র নয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাটো করার জন্য একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। যারা উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়, তারাই এই কাজ করছে।'

শাজাহান খানের নেতৃত্বে কমিটি কী কাজ করবে- এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টিকে ফোকাস করা হয়েছে। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কমিটি সুপারিশ করবে কীভাবে দুর্ঘটনা রোধ করে শৃঙ্খলা ফেরানো যায়। সড়কের উন্নয়ন হয়েছে, এবার শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। হতাশ হবেন না, সাময়িক কিছু সমস্যা রয়েছে।

সড়ক দুঘর্টনায় অতীতে বহু কমিটি গঠন করে বহু সুপারিশমালা প্রণয়ন হলেও এর অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও সড়কে বাস্তবায়ন না হওয়ার নজির রয়েছে। এসব অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমাদের চিন্তা-ভাবনা অনেক উচ্চ। কিন্তু বাস্তবায়ন ধীর। তাই দু'টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাতে সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আনা যায়'।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একাব্বর হোসেন, সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এমপি, সড়ক পরিবহন নজরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান, বিআরটিএ'র চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই'র (নিসচ) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দাকার এনায়েত উল্যাহ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী প্রমুখ।

ঢাকার যানজট নিরসনে অবৈধ পার্কিং বন্ধের সিদ্ধান্ত হয় কাউন্সিলের সভায়। নগরীতে শতাধিক সড়কে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। রাজধানীর ১৩০টি স্থানকে বাস স্টপেজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কিন্তু এসবস্থানে না থেমে যত্রতত্র বাস থামছে। যেখানে, সেখানে যাত্রী উঠানামা করছে। তাই যেসব স্থানকে বাস স্টপেজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানে যাত্রী ছা্‌উনী নির্মাণ করবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

কাউন্সিলের সভায় মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য, স্থানীয় সরকারের শাখা সড়ককে একটি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বলা হয়, মহাসড়কে সরাসরি যুক্ত হয়েছে শাখা সড়কগুলো। এ সড়কের ছোট গাড়িগুলো বিনা বাধায় মহাসড়কে উঠে যায়। ফলে দুর্ঘটনায় পরে। তাই মহাসড়কের সঙ্গে শাখা সড়কগুলো যুক্ত হওয়ার মুখে মোড় সৃষ্টি করা হবে। যাতে গাড়ি শাখা সড়ক থেকে সরাসরি মহাসড়কে উঠতে না পারে।

জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল পরিবহন খাতের সর্বোচ্চ ফোরাম। চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কাউন্সিলের সদস্য। পুলিশ প্রধান, ডিএমপি কমিশনারসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা কাউন্সিলে রয়েছেন। আছেন পরিবহন মালিক, শ্রমিক নেতারা। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও কাউন্সিলের সদস্য। প্রতি ছয় মাস অন্তর কাউন্সিলের সভা আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সবশেষ অর্থাৎ, ২৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৪ মাস আগে ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর।

এক বছরেরও বেশি সময় বিরতিতে অনুষ্ঠিত রোববারের সভায় বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। ২৫তম সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, বিআরটিএ যাচাই বাছাই ছাড়াই যানবাহনের ফিটনেস দেয়। এ কারণে লক্করঝক্কর যান চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। রোববারের সভাতেও এ বিষয়টি আসে। বিআরটিএ এবং ডিএমপি'র পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফিটনেসবিহীন গাড়ি জব্ধ করে রাখার মতো জায়গা নেই। তাই এসব গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো যায় না।

সভা সূত্র জানিয়েছে, ডাম্পিং স্টেশনের জায়গা নির্ধারণ করতে বলেন ওবায়দুল কাদের। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, ডাম্পিং স্টেশনের নির্মাণে জায়াগ চিহ্নিত করে আগামী সভায় উত্থাপন করা হবে। রাজধানীর কয়েকটি স্থানে সয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্ত হয় সভায়। খবর সমকাল অনলাইন