১৫ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল

বগুড়ায় হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী পাঁচগুণ বেড়েছে

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২১ ১২:৫৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯১০ বার।

বগুড়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রণ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তিও বাড়তে শুরু করেছে। ১৫ মার্চে পর থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ২৩ দিনে হাসপাতালগুলোতে পাঁচগুণ রোগী বেড়েছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এবার ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষও মারা যাচ্ছেন। 
চিকিৎসকরা বলছেন, প্রথম দফার তুলনায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের তীব্রতা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি এবার কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তাছাড়া এবার  আক্রান্তদের মৃত্যুও খুব দ্রুত ঘটছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ৫ এপ্রিল বগুড়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮৮জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদিন আফসার আলী (৪৫) নামে একজনের মৃত্যুও হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় ৫এপ্রিল আক্রান্তের হার গত ৩ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছিল। এর আগে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বগুড়ায় করোনায় আক্রান্তের হার ছিল ২৪ দশমিক ২১ শতাংশ। 
বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, ৫ এপ্রিল জেলার দু’টি পিসিআর ল্যাবে ৪০১জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৮জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ৩৮৮ নমুনায় ৮৬টি আর বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১৩টি নমুনা পরীক্ষায় আরও ২জন পজিটিভ হয়েছেন। এভাবে গত ১৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ২২দিনে জেলায় ৫২৮জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০৪জনকে স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসাধীন ওই রোগীদের মধ্যে ১৩জন মারা গেছেন। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ বছরের বেশ কয়েকজনও রয়েছেন।

বগুড়ায় যে তিনটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের সংখ্যা দ্রæত বাড়তে শুরু করেছে। ১৫ মার্চ তিনটি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগী ছিলেন মাত্র ২২জন। কিন্তু ৬ এপ্রিল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৩ দিনে তা পাঁচগুণ বেড়ে হয়েছে ১২৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী বেড়েছে বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ্ কমিউনিটি হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের সহকারি নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল হোসেন জানান, ১৫ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালটিতে মাত্র ১জন রোগী ভর্তি ছিলেন। কিন্তু ৬ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৮জন। বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় জানান, ২৩ দিনের ব্যবধানে তাদের রোগী বেড়েছে ২০জন। অন্যদিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বর্তমানে ওই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ৫৭জন রোগী চিকিৎসাধীন। এর আগে ১৫ মার্চ ভর্তি ছিলেন ২০জন।
তবে আশার কথা হলো রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মোহাম্মদ আলী ও শজিমেক হাসপাতালে ইনটেসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ২১টি শয্যা এখনও ফাঁকা আছে। অন্যদিকে বেসরকারি টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি  হাসপাতালে আইসিইউয়ের শয্যা খালি আছে ৫টি।
বগুড়ায় দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণের তীব্রতা বেশি বলে জানিয়েছেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম দফার তুলনায় দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের তীব্রতা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি এবার কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তাদের  মৃত্যুও খুব দ্রুত ঘটতে দেখা যাচ্ছে।’
করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন  জানান, অসচেতনতার কারণেই করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এখনও সময় আছে। আমাদের সতর্ক হতে হবে। যদি তা না হই তাহলে সামনে আরও বিপদ বাড়বে।