ঢাকার চকবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও মৃতের সংখ্যা ৬০ পেরিয়েছে

বিবিসি
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২০২ বার।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পুরনো অংশের চকবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই।

সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কন্ট্রোল রুম থেকে বিবিসি বাংলাকে জানানো হয়েছে যে মৃতের সংখ্যা ৬০ পেরিয়েছে।

যে ভবনে আগুন লেগেছিলো সেখানে আগুন দেখা না গেলেও সকাল আটটা নাগাদ ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিলো।

তবে এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ভবনের ভেতরে তল্লাশি চালানোর চেষ্টা করছিলেন ভেতরে আর কোনো মৃতদেহ আছে কিনা বা কেউ আটকে আছেন কি-না সেটি নিশ্চিত হতে।

গত রাত সাড়ে ১০টার পরে পুরনো ঢাকার চকবাজারে শাহী মসজিদের কাছে 'ওয়াহিদ ম্যানসন' নামের একটি ভবনে আগুন লাগার পর তা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ শুরু করে তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত কিছু বলেনি কর্তৃপক্ষ।

যদিও ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক কর্নেল রহমান বিবিসিকে জানিয়েছিলেন যে, পুরনো ঢাকার সংকীর্ণ রাস্তার কারণে ঘটনাস্থলে দমকলের বড় গাড়ি ঢোকাতে সমস্যা হয়েছে।

এছাড়া বিদ্যুতের তার এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির আধিক্যের কারণে ঘটনাস্থলের গাড়ি পৌঁছানো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্নেল রহমান।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটির নিচতলায় লাগা আগুন ক্রমে ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে আগুন আশেপাশের ভাবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।

ওদিকে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ভবনটির নিচতলায় সুগন্ধি তৈরির একটি কারখানা ছিল এবং ভবনটির বেসমেন্টে গোডাউন ছিল।

এছাড়া, ভবনের পাশেই রাসায়নিকের গুদাম ছিল বলে অনেকেই বলছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, আগুন লাগার পর ভবনের সামনে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছেন অনেকে।

২০১০ সালের জুনে পুরানো ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের কারখানায় আগুন ধরে ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

এরপর পুরানো ঢাকার আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের কারখানা বা সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

অনুমতি নেই রাসায়নিক রাখার

২০১০ সালের জুনে পুরানো ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের কারখানায় আগুন ধরে ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

এরপর পুরানো ঢাকার আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের কারখানা বা সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

তাহলে কিভাবে চকবাজারে রাসায়নিকের গুদাম থাকতে পারে?

বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে মিঃ খান বলেন, "নিষেধাজ্ঞার পরেও অনেকে হয়ত চোরাইভাবে রেখে ব্যবসাবাণিজ্য করে।

কর্তৃপক্ষের অগোচরে কাজ করে তারা। কিন্তু এর পরিণতি হচ্ছে এ ধরণের ঘটনা। "

সরু রাস্তা ও পানির সংকট

চকবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে, এর কারণ হিসেবে মিঃ খান সরু রাস্তা ও পানির সংকটকে প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন।

"অনেক দূর ঘুরিয়ে গাড়ি ভেতরে আনতে হয়েছে। সেই সঙ্গে এটা একটা জনবহুল এলাকা তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে বেশি।"

এছাড়া এখানে পানির অভাবও রয়েছে। এখন পুকুর থেকে পানি এনে কাজ চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তবে তিনি জানিয়েছেন আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।

ফায়ার সার্ভিসের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ৮৮ হাজার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

প্রাণহানি হয়েছে ১৪০০ জন, আহত হয়েছে অন্তত ৫০০০ মানুষ।