তাঁর স্ত্রী ডা. নিপা গাইনি চিকিৎসায় নাম কুড়িয়েছেন

বগুড়ার জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা. জুয়েল এখন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৪:৫২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫৭৮৩ বার।

জনপ্রিয় চিকিৎসক ডা. রেজাউল আলম জুয়েল বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) অধ্যক্ষের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব পেয়েছেন। ওই কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. আহসান হাবিব নান্নু সম্প্রতি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক হিসেবে ঢাকায় বদলী হওয়ায় পদটি শূণ্য হয়। এরপর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনিএকই কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে কর্মরত ছিলেন। 
কলেজের একটি  সূত্র জানায়, সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল আলম জুয়েল খুব শিগগিরই অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। এ সংক্রান্ত একটি ফাইল মন্ত্রণালয়ে  বিবেচনাধীন রয়েছে। পদোন্নতি পেলে ডা. রেজাউল আলম জুয়েলের পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের পথটি সুগম হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে ডা. রেজাউল আলম জুয়েলের বিশেষ অবদান রয়েছে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ওই হাসপাতালে ‘নিউরোলজি’, ‘গ্যাস্ট্রোএনট্রোলজি’, ‘কিডনী’ ও ‘হেপাটোলজি’ নামে স্বতন্ত্র চারটি নতুন বিভাগ চালুর ক্ষেত্রে অন্য অনেকের সঙ্গে ডা. রেজাউল আলম জুয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া ২০১৭ সালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট  (আইসিইউ) চালু এবং সর্বশেষ ওই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির যে কাজ চলছে সেই প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় তিনি অনেক ঘাম ঝড়িয়েছেন।
বগুড়াসহ এ অঞ্চলে হাড় জোড় (অর্থো-সার্জারি) বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত ডা. রেজাউল আলম জুয়েলের স্ত্রী আখতারী হোসেন চৌধুরীও পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনিও স্বামীর সঙ্গে একই কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত এবং গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডা. আখতারী হোসেন চৌধুরী নিপা বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলে গাইনি বিভাগের অন্যতম সেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। 
হাস্যজ্বল এবং সদালাপী এই চিকিৎসক দম্পতির ২ মেয়ে এবং ছেলের মধ্যে সব বড় মেয়ে আদিয়া জাহান ঐশী বাবা-মার মতই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। অপর দুই সন্তানের মধ্যে মেঝ মেয়ে জান্নাতুন নাইমা আদ্রি এবার বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি দিচ্ছে। ছোট ছেলে আহম্মেদ আবিদ মুতাসসিম বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
ডা. রেজাউল আলম জুয়েল এবং তাঁর স্ত্রী ডা. আখতারী হোসেন চৌধুরী- দু’জনেই নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। তারা দু’জন পবিত্র হজ্বব্রতও পালন করেছেন। ঘনিষ্ঠজনরা জানান, এই চিকিৎসক দম্পতি ধর্মীয় অনুসাশন মেনে চলার ক্ষেত্রেও বেশ যত্নশীল।
গ্রামের ছেলে রেজাউল আলম জুয়েল যেভাবে আজ ‘ডা. জুয়েল’
ডা. রেজাউল আলম জুয়েল বগুড়া তথা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে ‘ডা. জুয়েল’ হিসেবেই সর্বাধিক 
পরিচিত। বাংলাদেশের লাখো ছেলে-মেয়ের মতই তিনিও গ্রামে জন্মেছেন। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের দাহিলা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আব্দুল আজিজ সরকার এবং হাজেরা খাতুনের ৬ ছেলে-মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় রেজাউল আলম জুয়েল বাড়ির পাশের স্কুলেই পড়ালেখা করেছেন। তিনি শিবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাশ করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৯২ সালে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে যোগদান করেন। চাকরিরত অবস্থাতেই তিনি ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থোপেডিক্সে এমএস ডিগ্রী অর্জন করেন। তার প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের মার্চে তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। তারও ছয় বছর পর ২০১৪ সালের মার্চে তিনি ওই কলেজের উপাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।

ডা. রেজাউল আলম জুয়েল চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি সমানতালে চিকিৎসকদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছন। চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বগুড়া শাখায় তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বগুড়া শাখারও সাধারণ সম্পাদক। তবে পেশাগত ক্ষেত্রে এবং সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও ডা. রেজাউল আলম জুয়েল সময় পেলে ছুটির দিনগুলোতে নিজ গ্রামে ছুটে যান। সঙ্গে স্ত্রীকেও নিয়ে যান। তারা দু’জন নিজ গ্রামসহ আশ-পাশের গ্রামের গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ সরবরাহ করেন।
নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ডা. রেজাউল আলম জুয়েল পুণ্ড্রকথাকে জানান, তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে যোগদানের পর থেকে সকলকে নিয়ে কলেজের পড়ালেখা এবং হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন,  ‘এখন অধ্যক্ষ হিসেবে আমার দায়িত্ব আরও বেড়েছে। আমি প্রতিষ্ঠানটিকে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলর চেষ্টা করে যাব। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা  প্রয়োজন। আশাকারি অতীতের মতই সকলের সহযোগিতা পাব।’