মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বগুড়ার রামশহর দরবারের পীর মজিবর রহমানের ইন্তেকাল

পুণ্ড্রকথা রিপোর্টঃ
প্রকাশ: ০১ অগাস্ট ২০১৮ ০৬:১১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯১৩ বার।

বগুড়ার গোকুল রামশহর দরবার শরীফের পীর মজিবর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তিনি দরবার শরীফ সংলগ্ন নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিনি রামশহর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম পীর ডা. কহর উল্লাহর ছয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন। ১ আগস্ট বুধবার বাদ আসর দরবার শরীফ প্রাঙ্গণে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরিবারের সদস্যরা জানান, মজিবর রহমানের ইন্তেকালের পর তার পুত্র মোঃ মাহমুদ হোসেন রামশহর দরবার শরীফের গদ্দিনশীন পীর হবেন।

রামশহর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম পীর ডা. কহর উল্লাহর ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর তিন ছেলে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশও নিয়েছিলেন। যেটা স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের সহ্য হয়নি। প্রতিশোধপরায়ন স্থানীয় একদল রাজাকার ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর শেষ রাতে সেহেরীর সময় (তখন রমজান মাস ছিল) হানাদার পাকবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। বর্বর পাক হায়েনারা ডা. কহর উল্লাহর পরিবারের ৭ সদস্য এবং গ্রামের আরও ৪ নিরীহ মানুষসহ মোট ১১জনকে হত্যা করে। ডা.কহর উল্লাহর পঞ্চমপুত্র মোঃ তবিবুর রহমান ‘পীর বাড়িতে গণহত্যা’ শিরোনামে একটি লেখায় বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন।


রামশহর দরবার শরীফের ভক্তরা জানান, বগুড়া শহরের ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় এবং পৌরাণিক বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর বলে কথিত গোকুল মেধ এলাকা সংলগ্ন রামশহর গ্রাম। এই গ্রামে ছিলেন উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত পীর পরিবারের আদি পুরুষ পীরে কামেল ডাঃ কহর উল্লাহ। উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল এবং পশ্চিবঙ্গেও এই পীরের হাজার হাজার গুণমুগ্ধ ভক্ত শিষ্য ছড়িয়ে আছে। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহও তাঁরভক্ত ছিলেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বগুড়ায় আজিজুল হক কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বপালনকালে রামশহর দরবার শরীফে একাধিকবার আসা-যাওয়া করেছেন।


১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০-এর নির্বাচনে ওই পীর বাড়ির সদস্যরা বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেন যা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দারুণ প্রভাবিত করে। স্থানীয় জামাতীরা পীর সাহেবের এই ভূমিকায় প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে। তদুপরি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পীর সাহেবের তিন ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। স্থানীয় রাজাকার ও জামায়াত নেতা মাওলানা আবু তাহের ও ওসমান গনি বিষয়োল্লিখিত গণহত্যার স্থলে বোরকা পড়ে উপস্থিত ছিল বলে পীর সাহেবের পঞ্চম সন্তান মোঃ তবিবুর রহমান ‘পীর বাড়িতে গণহত্যা’ শিরোনামে তার লেখায় তা প্রকাশ করেন।


মোঃ তবিবর রহমান লিখেছেন, ‘মর্মান্তিক সেই হত্যার ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের ১৩ই নভেম্বর, রমজান মাস। হানাদার পাকিস্তান বাহিনী ও স্থানীয় আলবদর এবং রাজাকারদের সহায়তায় সেদিন পীরবাড়ির মোট ৭ জন পুরুষ সদস্য ও সেই গ্রামের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আরো ৪ জনসহ মোট ১১ জনকে পুকুর পাড়ে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এদের সবাইকে ধরা হয়েছিল সেহেরি খাওয়ার সময়, হয়তো কেউ খাওয়া শেষ করেছিল, আবার কয়েকজনকে অর্ধ সমাপ্ত সেহেরীতে থেকে তুলে নেওয়া হয়। ওই শহীদ ১১ জনের মধ্যে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক কিশোরও ছিল। তৎকালীন গদ্দিনসীন পীর মোঃ বেলায়েত হোসেন নরপশুদের কাছ থেকে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য একটু সময় চেয়েছিলেন কিন্তু ইসলাম রক্ষার শপথ নেয়া তথাকথিত খাঁটি মুসলমান পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের দালালরা সেই সুযোগ পীর সাহেবকে দেননি।’