শুধু এ কে আজাদ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরাই ঐতিহ্য মেনেছে

বগুড়ায় একুশে ফেব্রুয়ারিতে নগ্ন পায়ের প্রভাত ফেরি আর হয় না, কেন?

অরূপ রতন শীল
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:৩৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৫৩ বার।

একুশের চেতনা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে অসাম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের। বাঙালি জাতির ইতিবাচক যা কিছু অর্জন তার মূলে রয়েচে ১৯৫২-র একুশের শহীদদের আত্মত্যাগ। ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতেমহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ দিন প্রত্যুষে সর্বস্তরের মানুষ খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ করে এবং শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। ২০০১ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে। তবে এখন আর বাঙালির সেই ঐতিহ্য প্রভাতফেরি নেই। কারণ প্রভাতফেরিতে চিরচেনা নগ্ন পায়ে হেটে চলা এখন আর দেখা যায় না। 

প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বগুড়ায় যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে অমর একুশে । সকাল ৬টা থেকে বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এবং সংগঠন থেকে প্রভাতফেরির ব্যানারে ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করতে এসেছিল। কিন্তু একমাত্র  বগুড়ার এ কে আজাদ স্কুল ও কলেজ ছাড়া খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রকৃত প্রভাত ফেরির দৃশ্য। ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রা সবাই নগ্ন পায়ে হেটে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তবে কি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ শুধু র‍্যালীতেই এখন সীমাবদ্ধ- এ প্রশ্ন সংস্কৃতিকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন মানুষের। তাদের অনেকেই দোষারোপ করেছেন বর্তমান শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানসিকতার। আবার অনেকে বলেছেন মন থেকে শ্রদ্ধাবোধ ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। 

বগুড়ায় এবার নগ্ন পায়ে হেটে আসা একমাত্র প্রতিষ্ঠান এ কে আজাদ স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ শীতল কুমার সরকার পুণ্ড্রকথাকে বলেন, ‘মূলত ভাষা শহীদের প্রতি শিক্ষার্থীদের মনে শ্রদ্ধা বীজ বপণের জন্য নগ্ন পায়ে আসা। আর এটি আবহমান কাল থেকেই হয়ে আসছে। এটি ধরে রাখা আমার দায়িত্ব।' 

নগ্ন পায়ে হাটার প্রচলন প্রসঙ্গে সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম পুণ্ড্রকথাকে বলেন, 'প্রভাত ফেরিতে যে নগ্ন পায়ে হাটতে হয় এটা আমি এই প্রথম জানলাম। আসলে আমাদের শিক্ষকেরা কখনই আমাদের এই নিয়ে জানাননি।'

মুক্তিযোদ্ধা সরিফুল মাসুদ বলেন, ‘আমরা বাসায় থেকেই বের হতাম খালি পায়ে। কিন্তু আজকের প্রজন্মকে দেখলে অতীতকে স্বপ্ন মনে হয়।'

বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না বলেন, 'আমরা কয়েকবছর আগেও দেখেছি নগ্ন পায়ে হাটার র‍্যালী। কিন্তু এখন লজ্জা লাগে। আমাদের দেশপ্রেম এখন মুখেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। বর্তমান প্রজন্ম  ভাষা শহীদের আত্মত্যাগের তাৎপর্য ভুলে যেতে বসেছে।'
বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট কবি তোফাজ্জল হোসেন পুণ্ড্রকথাকে বলেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারিনি। তাদের মধ্যে অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ জাগানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা ও অভিভাবকেরা উদাসীন। যা আমাদের মাথা নিচু করে দেয়।'
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) আব্দুস সামাদ পুণ্ড্রকথাকে বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য খুবই লজ্জার। আমাদের সবার উচিৎ নগ্ন পায়ে হাঁটার ব্যাপারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার। আর সামনের বছর থেকে নগ্ন পায়ে হাটতে সকল প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হবে।‘