ভারত ও যুক্তরাজ্যে গেছে ২৮০ কোটি টাকার পণ্য

বগুড়ায় এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানী আড়াই গুণ বেড়েছে

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:২৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৫২৯ বার।

বগুড়া থেকে ভারত ও যুক্তরাজ্যের বাজারে পণ্য রপ্তানীর পরিমাণ এক বছরে আড়াই গুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ জেলা থেকে ওই দু’টি দেশে ৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার বা ২৮০ কোটি টাকা মূল্যের চার ধরনের পণ্য রপ্তানী করা হয়েছে। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিআই) মাধ্যমে ৮২৩টি লেটার অব ক্রেডিটে এসব পণ্য রপ্তানী করা হয়েছে। আগের বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালে একই সময়ের মধ্যে রপ্তানীর হয় ১ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার সমমূল্যেও ১০৬ কোটি টাকার পণ্য। চেম্বার নেতৃবৃন্দ বলছেন, ভাল মান এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায়  দেশের বাইরে বগুড়ায় উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
বিসিসিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া থেকে রপ্তানী করা পণ্যের তালিকায় রয়েছে, রাইস ব্র্যান ক্রুড অয়েল, পাটের তৈরি বস্তা ও সুতলী, পানি সেচের পাম্প এবং তৈরি পোষাক। এসবের মধ্যে তৈরি পোষাক ছাড়া সব পণ্যের গন্তব্য ভারতের বাজারে। আর তৈরি পোষাক রপ্তানী হয় যুক্তরাজ্যে। রপ্তানী করা পণ্যগুলোর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি প্রায় ৫৮ শতাংশই রাইস ব্র্যান ক্রুড অয়েল। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৬৩ কোটি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাটের তৈরি বস্তা, সুতা ও সুতলী। এসব পণ্যের রপ্তানী মূল্য ১১৬ কোটি টাকা। এছাড়া আরও ১২ লাখ টাকার তৈরি পোষাক রপ্তানী করা হয়েছে। 
শিল্পোদ্যোক্তারা জানান, স্বাধীনতার আগে থেকেই বগুড়ায় উৎপাদিত সাবান ও সিরামিক পণ্য বিদেশে রপ্তানি হতো। তবে গেল শতাব্দীর সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নানা কারণে রপ্তাীমুখি অনেক কারখানা একে একে বন্ধ হয়ে যায়। তবে একমাত্র সিরামিক কারখানাটি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এবং সেখানে উৎপাদিত পণ্য তখন পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয়েছে। পরবর্তীতে সেটিও বন্ধ হয়ে গেলে রপ্তানী বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পরে। তবে আশার কথা হলো আশির দশকের মাঝামাঝি ফাউ-্রি শিল্পের হাত ধরে বগুড়ায় নতুন করে শিল্পায়ন শুরু হয়। ফাউণ্ড্রি কারখানায় উৎপাদিত সেন্ট্রিফিউগাল পাম্প (সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য) কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি প্রতিবেশি দেশ ভারতেও এর চাহিদা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে চোরাই পথেই ভারতের বাজারে ঢুকে পরে। 
পরবর্তীতে স্থানীয় কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের পর ২০০৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানী শুরু হয়। তবে আমলাতান্ত্রিক নানা জটিতলায় মাঝে কয়েক বছর রপ্তানী বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সাল থেকে তা আবারও শুরু হয়েছে। বর্তমানে বগুড়ায় ৩৯টি ফাউ-্রি কারখানা রয়েছে। একইভাবে ১৯৯৯ সালে স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা ভারত থেকে জুট মিলের যন্ত্রাংশ এনে এ জেলায় মিল স্থাপন শুরু করেন। তবে ২০০৪ সালে আদমজী জুট মিল বন্ধ হয়ে গেলে তার যন্ত্রাংশ সহজলভ্য হয়ে পড়লে এ জেলায় জুট মিলের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় একে একে জেলায় ২৪টি জুট মিল গড়ে উঠেছে।
রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান ‘মজুমদার প্রোডাক্টডস্্’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার জানান, তারা ২০১৪ সাল থেকে ভারতে অপরিশোধিত রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানী করছেন। সড়ক পথে স্থলবন্দর দিয়ে তারা রপ্তানী করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘দেশের বাজারে রাইস ব্র্যানের চাহিদা এখনও খুব বেশি নয়। সে কারণে আমরা বাইরের বাজার ধরেছি।’
রপ্তানীকারক পাটকল ‘হাসান জুট মিল’ ও ‘হাসান জুট অ্যাণ্ড স্পিনিং মিল’-এর স্বত্বাধিকারী এবং হাসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম শফিকুল হাসান জুয়েল জানান, ২০০৩ সালে তারা প্রথম রপ্তানী শুরু করেন। সেই থেকে ক্রমেই রপ্তানী বাড়ছে। ২০১৭ সাল থেকে তারা পাটের তৈরি ব্যাগ বা বস্তা রপ্তানী শুরু করেছেন। তরুণ এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্য মান সম্মত এবং দাম কিছুটা কম হওয়ার কারণেই আমরা ভারতের বাজারে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করতে পেরেছি। যে কারণে প্রতি বছরই চাহিদা বাড়ছে।’ 
 তৈরি পোষাক রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মুন ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মিনহাজুল আজিজ জানান, তিনি এক সময় ইংল্যান্ডে বসবাস করতেন। পরে দেশে ফিরে তিনি তৈরি পোষাকের কারখানা দেন। এরপর তিনি সেগুলো রপ্তানী শুরু করেন। তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, জিন্স প্যান্ট, টি-শার্ট, হুডি এবং সোয়াট শার্ট তৈরি করে রপ্তানী করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত জাহাজেই পণ্য রপ্তানী করে থাকি। তবে মাঝে মাঝে বিমানেও পাঠানো হয়।’
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডািস্ট্রির সভাপতি মাছুদুর রহমান মিলন মনে করেন, এ জেলায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা গেলে রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ প্রতি বছরই বাড়তে থাকবে এবং দুই-তিন বছরের মধ্যে তা ১০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।