রেশমা [ সপ্তম পর্ব]

সাজিয়া আফরিন সোমাঃ
প্রকাশ: ০১ অগাস্ট ২০১৮ ১৭:৩৩ ।
শিল্প ও সাহিত্য
পঠিত হয়েছে ৬০৭ বার।

আজ ছোট বউ এর বাড়ি থেকে হাতেগোনা কয়েকজন লোক এসেছিলো। সাথে গ্রামের লোকদেরও বলতে ভোলেনি সালেহা। সুফিয়ার বাবার বাড়ির লোকজন যাওয়ার সময় ছোট বউ আর রইসকে সাথে নিয়ে গেলো। হাস্না নানীকে এতো করে বললো সালেহা ওদের সাথে যেতে কিন্তু বুড়িটা যাবে না। তার একই কথা সে বাড়ি ছাড়া কোথাও যাবে না। তাশলী ভাবী সুফিয়ার সম্পর্কে বোন হয়। সে সাথে গেলো কারণ সুফিয়ার বাবার বাড়ির পাশেই তার বাবার বাড়ি। একবারে বাবার বাড়ি ঘুরেও আসা যাবে।

কিন্তু হাস্না নানী তাশলী ভাবীকে একদম দেখতে পারেনা। সুফিয়া বলে- নানী তোমার বয়স হইছে মানুষরে এমন হিংসার চোখে দেখো ক্যা?

হাস্না- শোন বউ হামি মানুষ চিনি। গাঁয়ের বউকেরে যত কাইজ্যা  হয় সব ওই তাশলী লাগায়। এই বাড়িত খালি পারে না। ওর লিজের বাড়িতও শান্তি থোয়নি। ওই আসার পর থ্যাকা শান্তি চল্যা গেছে ওই বাড়ির।

সালেহা ভাবে বুড়িকে বুঝায়ে লাভ নাই,সে ভাবুক তার মন মতো,সালেহা এতো কিছু বোঝে না। সবাই তার চোখে ভালো। ওরা চলে গেছে বিকালে। সালেহা নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে সুফিয়াকে। নিজের যা ছিলো সব দিয়ে দিয়েছে। এখন পুরা বাড়ি এলোমেলো। হেদায়েতের বউ আর কত দিক দেখে? সালেহাও তাই হাত লাগলো,কাজ গুলা শেষ করতে পারলেই সবাই খেয়ে ঘুমাবে। সারাদিন কম খাটুনি যায় নি!!

পরশু আবার ওদের নিতে যেতে হবে। সলেহা কথা দিয়েছে এবার সে নিজেই যাবে ওদের আনতে। কাল ইয়াসিন বগুড়া যাবে কলেজ করতে,সালেহা ওকে টাকা দিয়ে এসেছে সুফিয়ার জন্য একটা শাড়ি,আলতা,টিপ,আর লাল ফিতা আনতে। এসব নিয়ে সালেহা যাবে ওদের বাড়ি সুফিয়াকে আনতে।

লাইলীর ঘুমের সময় হয়ে গেছে। সালেহা এখন যাবে শাশুড়ির ঔষধ খাওয়াতে। যেদিন সালেহা এই বাড়িতে এসেছিলো সেদিনই শেষবার রইস তার মা'র রাতের ঔষধ,আর পা,মাথা টিপে দিয়েছে। এর পর আর কখনই সালেহা তাকে করতে দেয়নি। সালেহা নিজেই শাশুড়ির যত্ন করে।

সালেহা- আম্মা ওষুধ খাওয়া লাগবে,পানি আনছি উঠেন।

লাইলী- দে বউ খ্যায়া ঘুমাই। তুই খাবু ককন? কার জন্যিকরে বস্যা আচু? আর সেই স্বপন দেখিস না বউ। তুই লিজেই সব বিল্যা দিচু।

সালেহা- আম্মা আজ দুপুরে খাইছি দেরিতে তাই আজ আর খামু না। আমি মাথা বিলি কাটি আপনি ঘুমান।

লাইলী- রইস যকন হলো,তকন তোর দাদী কত খুশি,বাড়ির মানুষ খুশিতে বাঁচেনা। তোর দাদা ব্যাঁচা আছিলো না। তারপরেও তোর দাদী কম করেনি রইস এর জন্যি। রইস ইসকুলেত গেলে ওর দাদী ওর পিছে পিছে গেছে,ছোলেক য্যান শিয়াল, কুকুরে না কামড়ায় তাই।

সালেহা- আম্মা আপনি ঘুমান, আমি জানি এগল্যান কথা। আপনি সব কইছেন বিয়্যার পর।

লাইলী- বউ, মনে কষ্ট ব্যাইন্ধা রাখিস না। দোয়া করি সারাজীবন তোর কোল জুড়্যা তোর নয়ন মনি থ্যাক। আল্লাহ তোর দিকে মুক তুল্যা চাবেই।

সালেহা- রইস, আমার আর আপনার মনের কষ্ট দূর হবি খুব তাড়াতাড়ি। আপনি ঘুমান।

লাইলী ঘুমিয়ে পরেছে। বাড়ির আর সবাই ঘুম। সালেহা উঠে বারান্দার জল চৌকিতে বসলো। এখানে বসলে আকাশ দেখা যায়। তাই রইস সালেহার জন্য এই জলচৌকি বানিয়েছে। সালেহা আজ সারারাত আকাশ দেখবে। আগে যেমন মন চাইলেই দুইজন বসে আকাশ দেখতো আর ফিস ফিস করে গল্প করতো যেনো তাদের কথায় কারো ঘুম না ভেঙ্গে যায়।

অনেক দূর থেকে শিয়ালের ডাল ভেসে আসছে। কুকুরও ডাকছে। অনেক ডাকছে। চোর ডাকাতের উৎপাত খুব। সেরকম কিছু নাতো? একটু একটু কারো পায়ের আওয়াজ আসছে। সালেহা লাফিয়ে উঠে রইসের ঘরে চলে গেলো। খাটের পাশে রাখা বক্স খুলে বন্দুক বের করে হাতে নিলো। সব রেডি করে ফেলে তাড়াতাড়ি। যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে সালেহা ওদের জান নিয়ে নিবে। পায়ের শব্দ বাড়ছে। ঠিক যেনো ওদের দরজার সামনে এসে থেমে গেলো।

বন্দুক চালানো এক রকম জোর করেই শিখিয়েছে রইস। সালেহার তেমন আগ্রহ ছিলোনা। মাঝে মাঝে পরিষ্কার করে রাখতো।কিন্তু রইসের কথা সে সালেহাকে শিখাবে। আর শিখিয়েছেও। আজ হয়ত সেই দিন যে দিনের কথা ভেবেই রইস ওকে শিখিয়েছিলো।

সালেহা গেটের দিকে বন্দুক তাক করে রেখেছে, আজ কিছু একটা করে বসবে সে- টক টক টক, গেটে টোকা দিচ্ছে কেউ। সালেহা সজাক, আবারও টোকা দিলো কেউ। চিরপরিচিত সেই শব্দ। তাহলে কি? না-না তা কি করে হয় ?! এতো রাতে!!! (চলবে)