আরও দু’টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

বগুড়ায় বিষাক্ত মদে মৃত্যুতে অভিযুক্ত পারুল হোমিওর লাইসেন্স বাতিল

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩০৬ বার।

বগুড়ায় বিষাক্ত মদ পানে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় আলোচিত সেই পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীর লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গত ২০ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ওই বিজ্ঞপ্তি বুধবার দৈনিক সমকাল-এ প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটিতে সারাদেশে বিভিন্ন ক্যাটাগরীর মোট ৮০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তাতে বগুড়ার পারুল হোমিও ল্যাবরেটরী ছাড়াও আরও দু’টি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।


ঔষধ প্রধাশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ না করা এবং উৎপাদন লাইসেন্স ইস্যুর শর্ত ভঙ্গের দায়ে বগুড়ার পারুল হোমিও ল্যাবরেটরি প্রাইভেট লিমিটেড এবং পুনম হোমিও ল্যাবরেটরীজের উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়। এছাড়া ড্রাগ কন্ট্রোল আইন ১৯৮২ এর ১৫ (১) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে বগুড়ার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ল্যাবরেটরীজের (ইউনানী) উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়।


চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি রোববার রাতে শহরের পুরান বগুড়া এলাকায় একটি বিয়ে বাড়িতে এবং শহরের কালিতলা ও ভবের বাজার এলাকায় বিষাক্ত মদ পানে ৬জনের মৃত্যু হয়। পরবর্তী কয়েক দিনে বগুড়ার কাহালু এবং শাজাহানপুর এলাকায় আরও ১০জনসহ মোট ১৬ জনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই সময় বিষাক্ত মদ পানে ৮ ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানানো হয়। তখনই পুলিশী তদন্তে পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীর নাম সামনে চলে আসে। কারণ মৃত এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা যেসব হোমিও দোকান থেকে বিষাক্ত মদ কেনার কথা জানিয়েছিল সেইসব দোকান মালিকরা সেগুলো পারুল হোমিও ল্যাবরেটরী নামে প্রতিষ্ঠান থেকে কেনার কথা জানিয়েছিল।


পরবর্তীতে বিষাক্ত মদ পানে অসুস্থ এক ব্যক্তির ভাই জনৈক মনোয়ার হোসেন পারুল হোমিও ল্যাবেরেটরীসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীসহ ১৬ জনের নামে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে দায়ের করা সেই মামলার পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীর স্বত্বাধিকারী শহরের ফুলবাড়ি এলাকার নুরুন্নবী ওরফে নুরনবী (৫৮) এবং তিনটি দোকান যথাক্রমে শহরের গালাপট্টি এলাকার মুন হোমিও হলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল খালেক (৫৫), করতোয়া হোমিও হলের স্বত্বাধিকারী শহিদুল আলম সবুর (৫৫) ও হাসান হোমিও হলের কর্মচারী আবু জুয়েলকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত মদ উৎপাদন এবং বিক্রির অভিযোগ আনা হয়।


বুধবার দুপুরে শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়া এলাকায় গ্রেফতার নুরুন্নবীর মালিকানাধীন পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীতে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়। বন্ধ ছিল একই ভবনের অপর প্রান্তে অবস্থিত নুরুন্নবীর ভাই নুর আলমের মালিকানাধীন পুনম হোমিও ল্যাবরেটরীজ নামে অপর প্রতিষ্ঠানও। অনেক ডাকাডাকির পর ওই দু’টি প্রতিষ্ঠানের ওপর গড়ে তোলা আবাসিক ভবন থেকে এক কিশোরীসহ দুই নারী নেমে আসেন। তারা নিজেদের পুনম হোমিও ল্যাবরেটরীজের স্বত্বাধিকারী নুর আলমের স্ত্রী ও কন্যা পরিচয় দেন। তবে কেউ তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তারা ঔষধ প্রশাসন থেকে উৎপাদন লাইসেন্স বাতিলের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা নারী। আমাদের নাম প্রকাশ করবেন না। আমরা ঔষধ প্রশাসনের লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে পুলিশের অভিযানের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে কারারুদ্ধ নুরুন্নবীর মালিকানাধীন পশের পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীও।


উৎপাদন লাইসেন্স স্থগিত করা বগুড়ার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ল্যাবরেটরীজের (ইউনানী) নামে অপর প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আইয়ুব আলী জানান, তিনি তার প্রতিষ্ঠানকে অন্যত্র স্থানান্তর করবেন বলেই ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করা আইয়ুব আলী দাবি করেন, আগামী তিন মাসের তার প্রতিষ্ঠানটির স্থানান্তর কাজ সম্পন্ন হবে এবং তারপর লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা হবে।


জেলায় বিষাক্ত মদপানে মৃত্যুর সেই আলোচিত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলার তদন্তকাজ এখনও শেষ হয়নি তাই চার্জশীটও দেওয়া যায়নি। গত ফেব্রæয়ারি মাসের গোড়াতে পারুল ও পুনম হোমিও ল্যাবটেরীতে অভিযান চালানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওই মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীর স্বত্বাধিকারী নুরুন্নবী এখনও কারাগারে আটক আছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হলেই মামলার চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হবে।