গোলেন্ড পেন বিজনেস অ্যাওয়ার্ড পেলেন ড. হোসনে আরা বেগম

পুণ্ড্রকথা রিপোর্টঃ
প্রকাশ: ০২ অগাস্ট ২০১৮ ০৬:১২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৫৪ বার।

বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ড. হোসনে আরা বেগম ‘গোলেন্ড পেন বিজনেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন। গত ২৯ জুলাই ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাত থেকে তিনি ওই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। নিজের কর্মপরিসরে অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ ট্রেড ক্যাটালগ ড. হোসনে আরা বেগমকে ওই পুরষ্কারে ভূষিত করেন। এ সময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ড. হোসনে আরা বেগম প্রায় চার দশক আগে ১৯৮০ সালে টিএমএসএস প্রতিষ্ঠা করেন। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টিএমএসএস বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা,স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোযোগ প্রযুক্তি, পরিবেশ রক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম ভিত্তিক পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৮ হাজারেরও বেশি কর্মী ছিল। বর্তমানে তা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয় ছিল ১৯৬ কোটি ৬৩ লাখ ৯০ হাজার ৪০৭ টাকা। ব্যয়ের পরিমাণ ১৮১ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৬ টাকা।
টিএমএসএস প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে ড. হোসনে আরা প্রায় ৬ বছর আগে দৈনিক সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তাঁর নিজগ্রাম বগুড়ার ঠেঙ্গামারায় হতদরিদ্র মহিলারা বেঁচে থাকার তাগিদে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করতেন। কিন্তু ভিক্ষা করতে গিয়েও তারা নানাভাবে নিগৃহীত হতেন। অনেক বাড়ির মালিক তাদের মারপিটও করতেন। তখন তারা নিজেরা বসে নতুন কিছু করার তাগিদ অনুভব করলেন। এক পর্যায়ে তারা প্রত্যেকেই এক মুঠো করে চাল উত্তোলন করে জমা করতে শুরু করেন। গড়ে তোলেন ‘ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ-আজকে যেটি ‘টিএমএসএস’ নামে পরিচিত। দেশের ৬৪টি জেলায় তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত সংস্থার বর্তমানে সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এটা দিন দিন বাড়ছে।
তিনি বলেন, আমি জন্মেছিলাম পুরুষ হয়ে। আমার নাম ছিল আব্দুস সামাদ। তবে সৃষ্টিকর্তার অপার ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে আমার মধ্যে জটিল শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। পরে অপারেশনের মাধ্যমে আমি পূর্ণাঙ্গ মহিলায় রূপান্তরিত হই। আর স্কুলে পড়ালেখার সময় থেকেই আমি আমার গ্রামে ‘বয়েজ ক্লাব’ নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলাম। সবাই আমাকে সাহসী ছেলে হিসেবেই জানতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেওয়ার পর যখন বগুড়ার একটি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করি তখন আমি রীতিমত একজন মহিলা। যেহেতু আগে থেকেই আমাকে সবাই সাহসী হিসবে জানতেন তাই গ্রামের দরিদ্র মহিলারা আমার কাছে ছুটে আসলেন এবং ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা চাইলেন।
সত্যি কথা বলতে কি আমার মা অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার পর তিনি আমাদের ভাইবোনদের খুব কষ্ট করে পড়ালেখা শিখিয়েছেন। জটিল শারীরিক পরিবর্তনজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকরা যখন বলেছিলেন আমার বাঁচার আশা খুবই ক্ষীণ। তখন মনে হয়েছিল আমি মারা গেলে আমার মার অনেক কষ্ট হবে। তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সৃষ্টিকর্তা যদি আমাকে জীবিত রাখেন তাহলে আমি বাকী জীবনটা মানুষের সেবা করে যাব। সেই ওয়াদা পূরণের জন্যই ১৯৮০ সালে আমি ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের সঙ্গে যুক্ত হই। এরপর ভিক্ষুকদের নিয়ে একটা সম্মেলন করি। প্রথম দিকে ১২৬জনকে সদস্য হিসেবে পাই। এরপর ক্রমান্বয়ে ৩৭৬জন মহিলাকে একত্রিত করে নতুন করে যাত্রা শুরু করি।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাকালীন সরকারি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ১৪৯৪। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয় সপ্তাহে আধা সের করে চাল জমা করা হবে। কিন্তু কারও চালের মান ভাল তো কার চাল খারাপ-এ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে পরবর্তীতে সপ্তাহে দুই টাকা করে জমা করা হয়। ওই টাকা থেকে সদস্যদের মধ্যে ঋণ বিতরণ শুরু করা হয়।