কোন দিকে গড়াবে পাক-ভারত সংঘাত?

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:৪৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২৭ বার।

সম্প্রতি কয়েক দফা সহিংসতা ভারত ও পাকিস্তানকে সংঘাতের কিনারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরাশক্তিগুলো পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

যেভাবে সংঘাত শুরু

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে একটি আধাসামরিক বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ জওয়ান নিহত হয়েছেন। এতে ভারতজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কাশ্মীরে গত তিন দশকের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে।

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর বড় ধরনের সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় কাশ্মীর। একটি যুদ্ধবিরতি রেখা ভূস্বর্গখ্যাত হিমালয় অঞ্চলটিকে দুভাগে বিভক্ত করে দেয়। ভারত-পাকিস্তান অখণ্ড কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে আসছে।

সশস্ত্র বিদ্রোহী দমন করতে ভারতে এ অঞ্চলে পাঁচ লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী হয় নিজেদের স্বাধীনতা কিংবা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হয়ে যেতে চাচ্ছেন।

ভারতের প্রতিক্রিয়া কী রকম?

পুলওয়ামায় বোমা হামলার পর পাকিস্তানকে চোয়াল-ভাঙা জবাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তানের কাছ থেকেও পদক্ষেপ দাবি করে আসছে ভারত।

কাশ্মীরের অস্থিরতা উসকে দিতে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধে বিদ্রোহীদের ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এমনকি পুলওয়ামা হামলায়ও পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করছে ভারত।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় যুদ্ধবিমান কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের আকাশে ঢুকে পড়ে। এর পর খাইবারপাখতুন খাওয়ার বালাকোট শহরের কাছে বোমা ফেলে পালিয়ে আসে। ভারতে ফের বোমা হামলা চালাতে জইশ-ই-মোহাম্মদের একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়ার দাবি করে নয়াদিল্লি।

ভারতীয় বিমানের আকাশসীমা লঙ্ঘন ও বোমা ফেলে যাওয়ার খবর স্বীকার করে নিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু দেশটি বলছে- কয়েকশ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যার ভারতীয় দাবি আত্মকেন্দ্রিক, বেপরোয়া ও কাল্পনিক। যার কোনো ভিত্তি নেই।

পাকিস্তানের জবাব কেমন ছিল?

বালাকোটে হামলার পর কঠোর প্রতিশোধের ঘোষণা দেয় ক্ষুব্ধ ইসলামাবাদ। ১৯৯১ সালের পর ভারত এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের মাটিতে বিমান হামলা চালায়।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে ভারতীয় অংশে ঢুকে পড়ে। সেখানে তারা কয়েকটি বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। নিজেদের শক্তিমত্তা দেখাতেই এ অভিযান বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।

কিন্তু পাকিস্তানি বিমানকে ভারতীয় যুদ্ধবিমান তাড়া করলে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। পরে আকাশযুদ্ধে দুই দেশ পরস্পরের বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে।

পাকিস্তান বলছে, তারা ভারতের দুটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত এক পাইলটকে আটক করেছে। নয়াদিল্লি তার একটি বিমান ধ্বংস হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। এ ছাড়া পাকিস্তানি একটি বিমান গুলি করে ফেলে দেয়ার কথাও জানিয়েছে ভারত। যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে।

বহু বছর ধরে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এমন উত্তেজনা দেখা যায়নি। পাকিস্তান তার আকাশপথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

পরবর্তী সময় কী ঘটতে পারে?

এ সংকটে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরাশক্তিগুলো দেশ দুটিকে সংযম অবলম্বন করার অনুরোধ জানিয়েছে। দুই দেশই যুদ্ধের হুমকি কমিয়ে আনতে চাচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, তারা উত্তেজনা আর বাড়াতে চাচ্ছেন না।

এখন পাকিস্তানের প্রতিশোধ এবং এক পাইলটকে আটক করা নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে তা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা চলছে।

ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেনম্যান বলেন, ভারত যদি ফের প্রতিশোধ নিতে চায়, তবে ঘটনায় নতুনমাত্রা যোগ হবে। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে তাদের এক পাইলট আটক থাকায় ভারতের বিকল্পগুলোকে সীমিত করে দিয়েছে। ভারত সম্ভবত আরও সতর্ক হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাহুল রয় চৌধুরী বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ একেবারে সীমিত করে দেয়া হলে সেখানে ভুল বোঝাবুঝি ও ভুল হিসাব বেড়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে যাবে।

পুর্ণোদ্যমে যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়তে সেখানে আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। পাকিস্তানকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে না দিতে ভারতের মধ্যেও চাপ রয়েছে।

রাহুল রয় বলেন, ভারতের শাসনক্ষমতায় একটি রক্ষণশীল সরকার রয়েছে। তারা পাকিস্তানের প্রতি খুবই কঠোর মনোভাব পোষণ করে। আবার আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভারতের জাতীয় নির্বাচন আসছে। কাজেই ভারত উত্তেজনা প্রশমনের সুযোগ দেবে, এমন কথা অবিশ্বাস্য।

তিনি বলেন, আমি জানি না, আমরা উপমহাদেশের সর্বশেষ ক্ষোভ দেখব কিনা, দুর্ভাগ্যবশত।