রেশমা [নবম পর্ব]

প্রকাশ: ০৩ অগাস্ট ২০১৮ ১৭:০১ ।
শিল্প ও সাহিত্য
পঠিত হয়েছে ৭১০ বার।

কোন খবর না দিয়ে হঠাৎ সালেহাকে দেখে তার মা'র বুকের ভিতরে ধুক করে উঠে। কি হলো মেয়ের? নিজের দুঃখ নিজেই ডেকে এনেছে,কি আর করার আছে? মেয়েটা বাবা-মার খুব আদরের। বাবা-মার একমাত্র মেয়ে সালেহা। যাকে পরিবারের সবাই ভীষন ভালোবাসে। দাদার ইচ্ছা ছিলো তাদের বাড়ির মেয়ে স্কুল পাশ করে তারপর শশুড়বাড়ি যাবে। কিন্তু ভালো ছেলে আর তাদের মতো সম্ভ্রান্ত পরিবার পাওয়ায় আর পড়া শেষ হয়নি সালেহার। এখনও দাদী,চাচা,চাচাতো ভাই এর পরিবারে সালেহা ভীষণ প্রিয়।

সালেহার মা - ক্যা মা সালে,তুই কোন খবর না দিয়া সাঝবেলাত আসলু,সব খবর ভালো তো? জামাই ভালো আচে?

সালেহা- মা সব খবর ভালো। বাড়িত ছোট বৌ আছে আম্মাক দেখবার পারবি,তাই আপনাক আর দাদীক দেখার জন্যি আসা। আর কোনদিন সময় হবি তা তো কওয়া যায় না। আপনি না হয় মন চাইলে যাবার পারবেন কিন্তু দাদী তো পারবি না। দাদীর শরীর ও খারাপ একন।

সালেহার মা- ভালো করিচু মা। কয়ডা দিন থাক,মরজিদের ধ্যারোত তোর যে পকুর ওডার মাচ তুলবে তোর চাচা। তোক আবার কে দিবার যাবি? আচ্চু যকন,তকন তুই লিয়্যা যাস।

সালেহার ছোট চাচা ফজলু খাঁন,সালেহা যাওয়ার খবরে ছুটে এসেছে। মেয়েটার কোন সমস্যা হলো না তো!! তাছাড়া কেনো হঠাৎ কোন খবর না দিয়ে আসা?

ফজলে চাচা- মা সালে? সব খবর ভালো তো?

সালেহা- হ চাচা,দাদীর শরীর ভালো না তাই ভাবছি দেখ্যা যাই।

ফজলে চাচা- "মা সালে" ইস্কুলের ধারের তোর পকুরের মাচ তোলা হয়নি ম্যালা দিন। তুই আচ্চু একন,তাই কাল মাচ তোলাই। আর দল্যাগাড়ী (পানা পুকুর) সেঁচার পর বহুত শোউল আর ছ্যাতান মাছ আনছিলো,তোর জন্যি সেগুলা তোর চাচী সুটকি করচে। যাওয়ার সময় তোক ব্যান্দা দিব্যার কই।

আর একটা কতা মা,তোর কাচলাত এবার মরিচ আবাদ করব্যার চাচ্চি,সারা বছরের মরিচ হয়্যা যাবি। আর যেল্যা ভিউ উচা সেগল্যাত ইবার আলু বুনবার কচি পটুর ব্যেটাক।

সালেহা - চাচা আপনি যা ভলো মনে করেন সেডাই করেন। আমার ঘরেত খাওয়ার লোক যদ্দিন আল্লায় না দিবে ততোদিন জমির আবাদ মানষেক দান করে দ্যান কি মরজিদেত দেন,খাওয়ার লোক যদি আল্লায় দেয় তকন দেকা যাবি।

ফজলে চাচা-  মা,তোর তুলা কি করবু? ৩/৪ বছর হয় সেল্যাও লেস না,বৈঠক খানার ঘর আর জায়গিরের ঘর খালি তুলাতে ভরা। ওই পাড়ার বেল্লালের বউ সেদিনক্যা চাবার আচ্চিলো। গরীব মানুষ,বেটির বিয়া দিবি- ল্যাপ,বালুশ বানান লাগবি বেটির,তাই। একন তোর জিনিস তোক না কয়্যা দিমু ক্যংকারা?

সালেহা- চাচা তুলা যার যতো খানি লাগে দিয়্যা দেন। কারো যাদি উপকার হয় তালে সেডাই করা ভালো। আপনি কালই জব্বারেক দিয়া পাঠান বেল্লালের বউ হোক কি বেল্লাল হোক য্যান আ্যাসা লিয়া যায়।

ফজলে চাচা- মা সালে? আর এক কতা। বাঁশঝাড় তো ভরে উঠলো। বহুদিন বাঁশ কাটাও হয়নি,কি কবু তুই তাই কিচু করিও নি।

সালেহা- চাচা আপনাকেরে যে কাজে লাগে লাগান,আমার দরকার নাই। কেউ যাদি চায় তাকও দিয়্যা দেন। আমি খালি আপনাদের দেখবার আসছি। আপনি যা ভালো মনে করবেন তাই করেন।

ফজলে- বড় ভাবী মানত করছিলো তোর ছোলের জন্যি। দুই বিঘা জমি ইস্কুলের জন্যি দিবি।

সালেহা- চাচা জমি দিলিপরে যদি ইস্কুল বড় করা যায়, ছোলপলের উপকার হয় তালে দিয়া দ্যান। মানত যকন করিচে সেডা তো পুরা করা লাগবি।

সালেহার মা- সালে মা,আমি দিবার চাইচি তোর বেটা-বেটি হলে।

সালেহা- মা দিয়্যা দেন,আল্লাহ যকন চাবে তকনই হবি। মানত করে সেডা লিয়া বসে থাকবেন ক্যা।

এই ভাবে সালেহার সব দিক দেকভাল করতে করতে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছে। ৫ দিন পার হয়ে গেছে কখন সালেহা খেয়ালই করেনি।  

দুপুরের দিকে চাচাতো ভাই রুমনের চিল্লাচিল্লিতে বাড়ির লোক সব দরজার দিকে গেলো। চাচা এবার চিল্লাচ্ছে- ভাবী,ও বড় ভাবী? দেকেন কে আসিচে?

রইস আর সুফিয়া ফজলে চাচার পাশে দাঁড়িয়ে। সালেহা কে দেখেই সুফিয়া ছুটে এসে সালাম করলো। একে একে সবার কাছে সুফিয়াকে নিয়ে গেলো সালেহা।

সালেহা- আম্মার শরীর ভালো আচে তো?

সুফিয়া - আম্মা আজ কয়দিন হয় কিচুই খায় না। আপনি বাড়ি চলেন। এতো দিন বাড়ি ছাড়া আচেন কারো ভালো লাগিচ্চেনা।

 সালেহা আর না বলতে পারেনি সেদিন।

তিন জন সারা রাস্তা কোন কথা বলেনি। রইস এর অভিমান সালেহা বুঝে। মানুটাকে কষ্ট দেওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলো না সালেহার। কিন্তু রইস-সুফিয়ার জন্য একটু একাকী সময় দরকার ছিলো,যেটা সালেহা থাকলে হয়ত হতো না। আজ সালেহার মনে হচ্ছে কত যুগ পরে যেনো সে বাড়ি ফিরছে! (চলবে)