দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ

বগুড়ায় বিএনপির ‘অবাধ্য’ ২৪ নেতা বহিষ্কৃত হচ্ছেন!

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০৬:০০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৩৪ বার।

বগুড়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুধু চেয়ারম্যানই নয়, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়া বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকেও বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে কারণে শনিবার বগুড়ায় জেলা বিএনপির বিশেষ সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যানের দু’টি পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মোট ২৪ ‘অবাধ্য’ নেতার নাম তালিকাভুক্ত করে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। তালিকাটি শনিবার রাতেই অথবা আজ রোববার ঢাকায় পাঠানোর কথা রয়েছে। 
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা ওই তালিকায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে বর্তমানে সক্রিয় নেতাদের পাশাপাশি অতীতে বিএনপির সাংগঠনিক পদে ছিলেন এমন নেতাদের নামও যুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দলীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের ওপর প্রচ- ক্ষুব্ধ হয়েছেন লন্ডনে নির্বাচিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নিজ জেলা বগুড়ায় দলীয় নেতাদের এমন অবাধ্যতাকে তিনি কোনভাবেই ক্ষমা করবেন না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে তারেক রহমান ‘অবাধ্য’ এসব নেতাদের ওপর এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে, নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও নিজের অনুগত এক নেতাকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার ‘অপরাধে’ বগুড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলমকেও ছাড় দেওয়া হয়নি। তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে মীর শাহে আলমের অনুগত নেতা হিসেবে শিবগঞ্জ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী স্থানীয় বিএনপি নেতা তাজুল ইসলামকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। 
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, শুরুতে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকায় বগুড়ায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ এতদিন শুধু চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিবগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তাজুল ইসলামকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানার পর নতুন করে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের নাম বহিস্কারের সুপারিশসহ জেলা থেকে কেন্দ্রে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেলকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি বগুড়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
সূত্রের দেওয়া তথ্য মতে, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে মাত্র তিনটি-আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া এবং শেরপুরে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোন নেতা নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে অন্য ৯টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ওই তিন পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদেরই বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
সভায় অংশ নেওয়া বিএনপি’র একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সবচেয়ে বেশি ৭জন অংশ নিয়েছেন শাজাহানপুর উপজেলায়। এরা হলেন: চেয়ারম্যান পদে আবুল বাশার, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জহুরুল ইসলাম জাহেরুল, সুলতান আহম্মেদ, মেহেরুল আলম মিশু, মহিলা ভাইস চেয়ার‌্যান পদে কোহিনুর আক্তার, জুলেখা খাতুন ও অ্যাডভোকেট রহিমা খাতুন মেরি। অন্যদিকে আর জিয়াউল হক লিপ্পন নামে মাত্র ১জন চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছেন জেলার সোনাতলা উপজেলায়। 
এছাড়া নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি ও গাবতলী উপজেলায় ৩জন করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে নন্দীগ্রাম ও সারিয়াকান্দিতে সবাই চেয়ারম্যান প্রার্থী। নন্দীগ্রাম উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন: অ্যাডভোকেট এ রাফি পান্না, আলেকজা-ার ও মাহফুজুর রহমান। সারিয়াকান্দির তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন মাসুদুর রহমান হিরু, অ্যাডভোকেট নূরে আযম বাবু এবং টিপু সুলতান। গাবতলীর তিন প্রার্থী হলেন চেয়ারম্যান পদে আনোয়ার এহসানুল বাশার জুয়েল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের দুই প্রার্থী সুরাইয়া জেরিন রনি ও সহমিনা আকতার রুমা।
ধুনটে দুই চেয়াম্যান প্রার্থী হলেন- আকতার আলম সেলিম ও আলিমুদ্দিন হারুণ। কাহালুতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে শাহাবুদ্দিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মমতাজ আরজু কবিতা প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাইদুল ইসলাম গফুর ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে  নাজমা আকতার এবং শিবগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন বিউটি বেগম।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলী আজগর তালুকদার হেনা জানান, উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি যারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেন নি এবং পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন তাদের নামও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে তালিকায় ওইসব নেতাদের মতামতও তুলে ধরা হয়েছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জন এবং তাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাই ওই নির্বাচনে দলের কোন নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদের নামের তালিকা কেন্দ্র থেকে চাওয়া হয়েছে বলেই আমরা সেটি প্রস্তুত করেছি। এখন কেন্দ্রই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে।’