বিমানবন্দরের পথে ওবায়দুল কাদের

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০১৯ ০৯:৪২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭০ বার।

হার্ট অ্যাটাকের পর জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেয়া হচ্ছে।ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও গাড়িবহর ইতিমধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরের কাছাকাছি গিয়ে পৌছেছে। সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।

 

সোমবার বেলা ৩টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) থেকে বের হয়। গাড়িটি ক্যান্টনমেন্ট হয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন।

 

ওবায়দুল কাদেরকে বিমানবন্দর হয়ে সিঙ্গাপুর নেয়া হতে পারে এই সম্ভাবনা সামনে রেখে আগে থেকেই বিমানবন্দর সড়ক ফ্রি রাখা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানবন্দরে পৌছবে গাড়ি বহর।

 

সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেয়া হবে। বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর যেতে সময় লাগবে ৪ ঘন্টা।

 

এর আগে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. দেবী শেঠি ওবায়দুল কাদেরকে দেখেন। তার পরামর্শেই ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

 

এমন তথ্য জানিয়েছে ওবায়দুল কাদেরে চিকিৎসায় গঠিক বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমইউর) মেডিকেল বোর্ড। বোর্ডের সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সোমবার দুপুর আড়াইটার পর এক ব্রিফিংয়ে জানান, উপমহাদেশের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠিই তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসার প্রশংসা করেছেন।

বিএসএমএমইউর ভিসি ব্রিফিংয়ে জানান, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা আগের চেয়ে স্থিতিশীল। রাত থেকেই তিনি উন্নতি করেছেন। এ মুহূর্তে তাকে বিদেশে স্থানান্তরে কোনো ঝুঁকি নেই।

 

এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সবশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন ডা. দেবী শেঠিসহ মেডিকেল বোর্ড। এ সময় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় আসা তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও ছিলেন।

 

ওবায়দুল কাদেরকে দেখার পর ডা. দেবী শেঠি তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি জানান, ওবায়দুর কাদেরের অবস্থা উন্নতির দিকে। এই মুহূর্তে তাকে বিদেশ নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে কোনো ঝুঁকি নেই। ডা. কনক কান্তি জানান, ওবায়দুল কাদেরকে মাউন্ট এলিজাবেথে নেয়া হবে। এক ঘণ্টার মধ্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে রওনা করা হবে। এই লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

 

এর আগে দুপুর ২টার দিকে ভারতের বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট ডা. দেবী শেঠি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফসাপোর্টে থাকা সেতুমন্ত্রীর শয্যাপাশে যান।

 

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে আসা তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও দেবী শেঠির সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের সবশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।

 

সূত্র জানায়, ওবায়দুল কাদেরকে দেখে তাৎক্ষণিক মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন ডা. দেবী শেঠি। সেই বৈঠকেই ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হয়। ওবায়দুল কাদের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার ৪ ঘণ্টার স্ট্রেস সামলাতে পারবেন-এটি নিশ্চিত হওয়ার পরই মেডিকেল বোর্ড তাকে মাউন্ট এলিজাবেথ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে ডা. কনক কান্তি জানান, ডা. দেবী শেঠি বলেছেন- সেতুমন্ত্রীকে যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেটি সঠিক। পৃথিবীর যে প্রান্তেই নেয়া হোক একই চিকিৎসা দেয়া হবে। তবু চাইলে তাকে বিদেশে নেয়া যেতে পারে।

 

এর আগে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে ভারতের এই চিকিৎসক আজ সোমবার বেলা দেড়টায় বিএসএমএমইউতে পৌঁছেন।

 

সোমবার বেলা ১২টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার নামার কথা ছিল। কিন্তু তার আসতে ১ ঘণ্টা দেরি হয়।

 

ডা. দেবী শেঠিকে বিমানবন্দরে গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধিদল।

 

রোববার বিএসএমএমইউর চিকিৎসক ও সরকারি পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল- ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে দেশের বাইরে নেয়া হবে। সেটি সম্ভব না হলে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসককে বিএসএমএমইউতে এনে তার চিকিৎসা দেয়া হবে।

 

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডা. দেবী শেঠিকে আনার কথা ওঠে। শেষ পর্যন্ত আজ তাকে ঢাকায় আনা হয়। আজ দুপুর ১২টায় দেবী শেঠির বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল। কিন্তু তার আসতে ১ ঘণ্টা দেরি হয়। তার দেরি হওয়ার কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে- ফ্লাইট জটিলতায় তার আসতে দেরি হয়েছে।

 

এর আগে রোববার রাতে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসকদের তিন সদস্যের একটি দল ঢাকায় পৌঁছে।

 

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিক মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, সিঙ্গাপুর থেকে একজন হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ, একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ও একজন টেকনিশিয়ান এসেছেন। তারা ওবায়দুল কাদেরের রিপোর্ট ও তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা একটু উন্নতি হয়েছে।

 

রোববার সকালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সিসিইউর ২ নম্বর বেডে লাইফসাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

 

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের পক্ষ থেকে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিএসএমএমইউ কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসানের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন প্রিভেনটিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক, অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত ভৌমিক, অধ্যাপক ডা. একেএম আক্তারুজ্জামান, কার্ডিও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রেজওয়ানুল হক, অধ্যাপক অসিত বরণ অধিকারী, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, ডা. তানিয়া সাজ্জাদ প্রমুখ।

 

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে বিএসএমএমইউতে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ওবায়দুল কাদেরের শয্যার পাশে গিয়ে কাদের কাদের বলে ডাক দেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের দুই-তিন সেকেন্ডের জন্য চোখের পাতা নাড়েন। ওবায়দুল কাদেরকে দেশের বাইরে নেয়া হবে কিনা— নেতারা জানতে চাইলে সেই সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপাতত দেশের বাইরে নেয়ার দরকার নেই। এখানেই চিকিৎসা চলবে।’ প্রায় আধা ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলেন শেখ হাসিনা।

 

পরে বিকাল ৪টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও তাকে দেখতে যান বিএসএমএমইউতে।