দুদকের আবেদন

বগুড়ায় মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দিল আদালত

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০১৯ ১২:৪৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৯২ বার।

বগুড়ায় যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা আলোচিত আব্দুল মতিন সরকারের অবৈধ সম্পদ ক্রোক এবং তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়র স্পেশাল জজ নরেশ চন্দ্র সরকার গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ দিয়েছেন। এর ফলে আব্দুল মতিন সরকার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ অন্য কারও কাছে হস্তান্তর এবং ব্যাংকে রাখা অর্থ কারও কাছে স্থানান্তর করতে পারবেন না।
আব্দুল মতিন সরকার দেশজুড়ে আলোচিত কিশোরী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী বহিস্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের বড় ভাই। ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে তুফান সরকার ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। তার ১০দিন পর তুফানের স্ত্রীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ২৮ জুলাই ওই কিশোরী ও তার মাকে মারধরের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়। ওই ঘটনায় মামলার পর পুলিশ তুফান ও তার স্ত্রীসহ ১০জনকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে অন্য আসামীরা জামিনে বেড়িয়ে গেলেও তুফান সরকার এখনও কারাগারে আটক রয়েছেন।
মধ্যযুগীয় ওই নির্যাতনের খবর সেই সময় প্রায় সবগুলো গণমাধ্যম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। এর পর পরই শ্রমিক লীগ বগুড়া শহর কমিটির আহবায়ক তুফান সরকারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে তার বড় ভাই শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকারকেও বহিষ্কার করা হয়। দুদকের পক্ষ থেকেও দুই ভাইয়ের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়। পরে দুদকের পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ মতিন সরকার এবং ৭ মার্চ তুফান সরকারকে চিঠি দিয়ে তাদেরকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। দুদকের নির্দেশনা অনুযায়ী মতিন সরকার ২৫ মার্চ এবং তার ভাই তুফান সরকার ২৭ মার্চ সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
এরপর তদন্তে নেমে দুদক মতিন সরকারের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে ৩ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন এবং আরও প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার সম্পদ গোপনের প্রমাণ পায়। একইভাবে তার ছোট ভাই তুফান সরকারের বিরুদ্ধেও অসাধু উপায়ে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা সম্পদ অর্জন এবং আরও প্রায় ৩০ লাখ টাকার সম্পদ গোপনের প্রমাণ মেলে। দীর্ঘ প্রায় ৯ মাসের তদন্ত শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদক বগুড়া কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর বগুড়া সদর থানায় আব্দুল মতিন সরকার ও তার ভাই তুফান সরকারের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেন। 
বগুড়ায় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, আব্দুল মতিন সরকারের মামলাটি তদন্ত চলছে। এ পর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার মনে করছেন আব্দুল মতিন সরকার অবৈধভাবে অর্জিত তার সম্পদ ও অর্থ অন্যদের কাছে হস্তান্তর এবং স্থানান্তর করতে পারেন। এ জন্য দুদকের পক্ষ থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আব্দুল মতিনের অবৈধ সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব ফ্রিজ করার আবেদন জানানো হয়। দুদকের পিপি আবুল কালাম আজাদ জানান, আদালতের এ ধরনের আদেশের ফলে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদগুলো আব্দুল মতিনের দখলেই থাকবে কিন্তু তিনি তা কাউকে হস্তান্তর করতে পারবেন না। একইভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থও স্থানান্তর করতে পারবেন না।