হিরো আলমকে কোর্ট হাজতে নেওয়া হয়েছে

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৭:৫০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৬৬ বার।

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারপিটের মামলায় গ্রেফতার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমকে বৃহস্পতিবার সকালে থানা হাজত থেকে আদালতের হাজতখানায় পাঠানো হয়েছে। পুলিশ তাকে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার তারিকের আদালতে তুলবে। তাকে কারাগারে যেতে হবে কি’না তা আদালতই নির্ধারণ করবেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার সাব ইন্সপেক্টর আব্দুর রহিম জানান, হিরো আলমের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নারী নির্যাতনের মামলা ছিল। তিনি বলেন, হিরো আলমের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে নারী নির্যাতনের একটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ওই মামলাটি পরবর্তীতে হয়তো নিষ্পত্তি হয়েছে। যে কারণে তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কোন সুযোগ নেই।’
মিউজিক ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনায় আসেন বগুড়ার কেবল অপারেটর ব্যবসায়ী হিরো আলম। গত একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে বগুড়ায় প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। এ নিয়েও আলোচিত হন হিরো আলম। 
অভিযোগ উঠেছে, পরকীয়া ও দ্বিতীয় বিয়ের প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে পিটিয়ে আহত করেছেন হিরো আলম। এ ঘটনায় তার স্ত্রী সাবিয়া আক্তার সুমি (২৮) আহত হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই ঘটনায় তার শ্বশুড় সাইফুল হিরো আলমের বিরুদ্ধে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওদিকে হিরো আলমও শ্বশুড়ের বিরুদ্ধে মারধরের পাল্টা অভিযোগ দাখিল করেছেন। পরে বুধবার রাত পৌণে ১১টায় বগুড়া সদর থানার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের আগে হিরো আলম অভিযোগ করেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা লুটে নিয়েছে। তবে গ্রেফতারের পর হিরো আলম বলেন, তার স্ত্রী রাব্বি নামে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়য় লিপ্ত। তিনি স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘তিনদিন আগে আমি তার গালে দু’টি চড় দিয়েছিলাম।’ 
বুধবার হিরো আলমের স্ত্রী সুমি অভিযোগ করে বলেন, হিরো আলম ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এ কারণে বগুড়ায় থাকা আমার ও সন্তানের কোনো খবর রাখেন না। সংসারের খরচ দেন না। এর প্রতিবাদ করায় আগেও আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন তিনি।
সুমি জানান, দুই মাস পর গত মঙ্গলবার রাতে হিরো আলম বগুড়া শহরতলীর এরুলিয়া গ্রামে নিজ বাসায় আসেন। বাসায় ফেরার পর থেকে বিছানায় শুয়ে একটানা তিন ঘণ্টা মোবাইলে ঢাকার এক নারীর সঙ্গে কথা বলেন। এর প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করেন আলম। খবর পেয়ে সুমির বাবা ও াত্মীয়রা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হিরো আলমের শ্বশুর সাইফুল ইসলাম বলেন,  আলম বেশ কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সুমিকে আবারও নির্যাতন করে। খবর পেয়ে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে ওকে উদ্ধার করে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করি। সুমির মাথার পেছনে রক্তাক্ত জখম হয়েছে।
এ ঘটনায় তিনি হিরো আলমের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, হিরো আলম দীর্ঘদিন ধরে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিল। যৌতুকের জন্য সে তার স্ত্রীকে মারধর করত।
এদিকে সুমিকে মারধরের খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে হিরো আলমকেও মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় হিরো আলম তার শ্বশুর, স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তার শ্বশুর সাইফুল ইসলাম ও স্ত্রী সাদিয়া বেগম সুমিসহ পাঁচব্যক্তি বাড়িতে এসে তাকে কাঠ দিয়ে মারধর করে। এরপর তার বাসা থেকে ৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
বগুড়া সদর থানার এসআই আব্দুর রহিম বুধবার দুপুরে জানান, মঙ্গলবার রাতে হিরো আলম থানায় হাজির হয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বুধবার সকালে তিনি ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, হিরো আলম নিজেও তার স্ত্রীকে মারধর করেছেন। এ কারণে তার স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় তার শ্বশুর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যা পরবর্তীতে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
বগুড়ার কোর্ট ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ জানান, হিরো আলমের মামলার শুনানি এখনও হয়নি। তাকে কোর্ট হাজতে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হিরো আলমের ভাগ্যে কারাবাস আছে কি’না সেটা আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’